الأربعاء، 10 مارس 2021

***** আসমাউল হুসনা সিরিজ *****

 

***** আসমাউল হুসনা সিরিজ *****
আস-সালাম নামের অর্থ।
-- ডঃ ইয়াসির কাদি
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রহমান এবং রহিম। রাসূলুল্লাহ (স) এর প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক যাকে আল্লাহ রাহমাতুল্লিল আলামিন করে পাঠিয়েছেন। অতঃপর...
ইনশাআল্লাহু তায়ালা, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার কিছু নাম এবং গুণাবলী নিয়ে আমাদের আলোচনা আবারো শুরু করতে যাচ্ছি। আজকের আলোচনার জন্য আমরা বাছাই করেছি আস-সালাম নামটি। আস-সালাম নামটি আল্লাহর সেসব নামের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো 'প্রপার নাউন বা নামবাচক বিশেষ্য' হিসেবে আসেনি। নামবাচক বিশেষ্য হিসেবে আসা নাম হল যেমন, আস-সামি, আল-আলীম, আল-বাসির, আল-গাফুর। আস-সালাম এসেছে মাসদার হিসেবে। বিশেষ্য নয়, একটি ধারণা। সালাম থেকে নির্গত হওয়া নাম হবে, সা-লেম বা সালিম। তাহলে সা-লেম এবং সালিম হল বিশেষ্য। কিন্তু, আস-সালাম বিশেষ্য নয়, এটি আসলে একটি মাসদার। মাসদারের বাংলা প্রতিশব্দ নেই। এটি দ্বারা একটি ধারণা প্রকাশ করা হয়।
তো, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নিজেকে 'আস-সালাম' নামে অভিহিত করেছেন। আর এই নামটি কুরআনে শুধু একবার এসেছে। সূরা হাশরের বিখ্যাত শেষ তিন আয়াতের এক জায়গায় এসেছে। هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ— শুধু এই একবারই 'আস-সালাম' নামটি এসেছে।
আস-সালামের অর্থ আমরা সবাই জানি। আমরা পরস্পরকে অভিবাদন জানাই "আস-সালামু আলাইকুম" বলে। আমাদের ধর্মের নামও একই শব্দমূল থেকে এসছে, আল-ইসলাম। আমাদের নাম মুসলিমও একই শব্দমূল থেকে নির্গত হয়েছে। তাহলে, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা হলেন, আস-সালাম। কিন্তু, এর দ্বারা আসলে কী বোঝায়? আপনি যদি আরবের সাধারণ কাউকে জিজ্ঞেস করেন, এমনকি কোন অমুসলিম আরবকেও জিজ্ঞেস করেন, 'সালাম' অর্থ কী? সে জবাবে বলবে, শান্তি। শব্দগত দিক থেকে এই অর্থ ঠিক। তথাপি, অর্থটি পুরোপুরি সঠিক নয়। আস-সালাম অর্থ শুধু শান্তি নয়, এটি খুবই সাধারণ একটি অনুবাদ।
আস-সালাম মানে: মন্দের অনুপস্থিতি, আস-সালাম মানে: ক্ষতির অনুপস্থিতি; যেটা শান্তির অর্থও প্রকাশ করে। এটা শুধু একটা অর্থ। একটা ভাবার্থ।
আস-সালাম যখন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার প্রতি আরোপ করা হয়, তখন এটি তিনটি অর্থ প্রকাশ করে। প্রথম অর্থ হলো, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা স্বয়ং কখনোই কোনো নেতিবাচক গুণে ভূষিত নন। আল্লাহর মাঝে কোন খুঁত নেই। তিনি হলেন, আস-সালাম। যার কোন খারাপ গুণ নেই। তাহলে, যেহেতু আল্লাহ হলেন আস-সালাম, তাই তিনি ত্রুটিহীন। যেহেতু আল্লাহ হলেন আস-সালাম, তাই তাঁর কোন পার্টনার নেই। তাঁর কোনো সন্তান নেই। তিনি ঘুমান না। তিনি ভুলে যান না। তো, আস-সালাম মানে যিনি সবদিক থেকে নিষ্কলঙ্ক। কারণ, তাঁর প্রতি কোনো নেতিবাচকতা আরোপ করা যায় না। আর রাসূলুল্লাহ (স) এর হাদিস থেকেও এ কথা জানা যায়, যখন তিনি বলেছেন, "ওয়াসাররু লাইসা ইলাইক " "আমরা আপনার প্রতি কোনো ত্রুটি আরোপ করি না, ও আল্লাহ।" কেন? কারণ, আস-সালাম কোনো ত্রুটির উৎস হতে পারেন না। 'শার' বা ত্রুটি আস-সালামের প্রতি আরোপ করা যাবে না।
অতএব, আস-সালাম অর্থ: এক নাম্বারে, আস-সালাম হলো সেই সত্ত্বা, যার নিজের মাঝে কোনো ধরণের অপূর্ণাঙ্গতার বৈশিষ্ট্য নেই। আল্লাহ প্রতিটি দিক থেকে পরিপূর্ণ। কারণ, তিনি হলেন আস-সালাম।
আস-সালামের দ্বিতীয় অর্থ: সালামের উৎস হলেন আস-সালাম। আমরা কোথা থেকে সালাম পাই। সালাম বলতে আমরা বুঝাচ্ছি, মন্দের অনুপস্থিতি— যার মানে শান্তি। যে কোনো ধরণের ক্ষতির অনুপস্থিতি— যার মানে নিরাপত্তা। কে আমাদের শান্তি এবং নিরাপত্তা দান করেন? কে চূড়ান্ত শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেন? তিনি হলেন, আস-সালাম। তাহলে, আস-সালাম হলেন, সকল শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস। এটা হলো, দ্বিতীয় অর্থ। আমরা কোথা থেকে শান্তি পাই? আমরা কোথা থেকে পরিতৃপ্তির অনুভূতি লাভ করি? কে আমাদেরকে পরিপূর্ণতার মত আশীর্বাদপুষ্ট অনুভূতি দান করেন? সন্তুষ্টির অনুভূতি দান করেন? নিরাপত্তার অনুভূতি দান করেন? তিনি হলেন, আস-সালাম। যার করুণায় আমরা এই অনুভূতিগুলো লাভ করি।
তাহলে আল্লাহ হলেন আস-সালাম, মানে দ্বিতীয়ত, তিনি প্রশান্তি দান করেন। আর সবচেয়ে নিখুঁত শান্তি, সবচেয়ে নিখুঁত মন্দের অনুপস্থিতি হলো, আমাদেরকে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা করা এবং তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করতে দেয়া। শুধু আস-সালাম এই চূড়ান্ত শান্তির গ্যারান্টি দিতে পারেন। অতএব, এটা হলো সালামের দ্বিতীয় অর্থ।
আস-সালামের ৩য় অর্থ হলো: আস-সালাম হলো সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর প্রতি বিশ্বাসীদের সালাম দিয়ে অভিবাদন জানাবেন। তো, আস-সালাম হলো সে সত্ত্বা যিনি তাঁর প্রতি যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদেরকে সালাম দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন। আল্লাহ ঈমানদারদের সালাম দিয়ে অভিবাদন জানাবেন। تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ - “যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (33:44) আল্লাহর অভিবাদন হবে যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে (অর্থাৎ, তাঁর প্রতি বিশ্বাসীরা। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।) তাদেরকে অভিবাদন জানানো হবে সালাম দিয়ে। তো, এটা হলো আস-সালামের অর্থ।
এখানে আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয়ের অবতারণা করছি। আস-সালাম হলো প্রথম শব্দ যা আল্লাহ্‌ আমাদের আদি পিতা আদমকে শিখিয়েছেন। "وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا" (আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন।২:৩১) একেবারে প্রথম শব্দ। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, "আল্লাহ্‌ যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন আর তাঁর রুহ ফুঁকে দিলেন, তিনি আদমকে বললেন, ও আদম! ঐ ফেরেশতাদের কাছে যাও এবং তাঁদেরকে বল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এবং তাঁদের জবাব মুখস্ত করে রাখো। কারণ, এটা হবে তোমার এবং তোমাদের সন্তানদের অভিবাদন— কিয়ামতের দিবস পর্যন্ত।"
সুতরাং, প্রথম যে শব্দটি আল্লাহ্‌ আদম (আ) কে বলার জন্য শেখালেন তা হলো এই অভিবাদন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আর ফেরেশতারা জবাবে বললেন, ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। তাঁরা 'ওয়াবারাকাতুহ' বাড়িয়ে বললেন। আদম (আ) এটা মুখস্ত করে রাখলেন। আদম (আ) এর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষেরা, আদমের সন্তানেরা, নবীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী সকল মানুষেরা— তারা সবাই পরস্পরকে আসসালামু আলাইকুম বলে অভিবাদন জানায়। ইয়াহুদিরা বলে, শালোমোলাইখুম। খ্রিস্টানরা একসময় বলত, প্যাক্স ভবিস্কাম— তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এগুলো সবই ইব্রাহিম (আ) এর অনুসারী ধর্মগুলোর সংস্কৃতি। আজকের দিন পর্যন্ত যা বর্তমান আছে।
এছাড়াও রাসূল (স) যখন মদিনায় হিজরত করেন তাঁর প্রথম নির্দেশ ছিল সালাম ছড়িয়ে দেয়া। এ নিয়ে কয়েকমাস পূর্বে আমি একটি খুৎবা দিয়েছিলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের বিখ্যাত হাদিস নিয়ে। মদিনায় প্রবেশ করার পর প্রথম যে শব্দ রাসূল (স) উচ্চারণ করেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ ‏"— "হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো...।" এটা ছিল তাঁর প্রথম নির্দেশ, রাসূল (স) যখন মদিনায় প্রবেশ করেন। সালামের অভিবাদন ছড়িয়ে দাও।
অধিকন্তু, আমাদের রাসূল (স) যখন সাহাবাদেরকে আল্লাহর প্রশংসা করার আদেশ দান করেন...নামাজের মধ্যে আমরা যে 'আত্তাহিইইয়াতু' পড়ার জন্য বসি, প্রথমদিকে তিনি সাহাবাদের "আত্তাহিইইয়াতু লিল্লাহি.. " শেখাননি। তিনি শুধু বলেছেন, যখন বসবে আল্লাহর প্রশংসা করবে। তাই, সাহাবারা নিজের মত করে আল্লাহর প্রশংসা করতে লাগলো।
একদিন রাসূল (স) শুনতে পেলেন তাঁরা বলছে, আসসালামু আলাল্লাহ, আসসালামু আলা জিব্রিল, আসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ। তো, তাঁরা আল্লাহর প্রশংসা করার চেষ্টা করল, আসসালামু আলাল্লাহ বলার মাধ্যমে। তখন রাসূল (স) বললেন, ইন্নাল্লাহা হুয়াস সালাম। আল্লাহ্‌ হলেন আস-সালাম। আপনার পক্ষে তো আল্লাহর প্রতি সালাম পাঠানো সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌ হলেন সালামের উৎস। যখন বলবেন, আল্লাহর প্রতি সালাম; তখন এই সালাম কোত্থেকে আসবে? আল্লাহ্‌ হলেন, সালাম। আপনার পক্ষে আল্লাহর প্রতি সালাম পাঠানো সম্ভব নয়। তিনি নিজেই আস-সালাম। এরপর তিনি তাদের শিখিয়ে দিলেন নামাজের মধ্যে বসলে বল, আত্যাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তইয়িবাত...। তিনি তাঁদেরকে এই দু'আটি শেখালেন যা আমরা সবাই মুখস্ত করেছি। কিন্তু, সাহাবায়েকেরাম এই ক্ষেত্রে ভুল করলেন, কারণ তাঁরা এর চেয়ে ভালো দুআ জানতেন না।
প্রসঙ্গত, একটি পাদটীকা: সুবহানাল্লাহ! পুরুষ সাহাবীরা এ ক্ষেত্রে গুলিয়ে ফেললো। তাঁরা একটি ভুল করেছে। কিন্তু, মহিলা সাহাবী, শ্রেষ্ঠ মহিলা সাহাবী খাদিজা (রা)... বুখারি শরীফের একটি হাদিস। এই হাদিসের অনেক আগে, মদিনাতে সাহাবীদের আত্তাহিয়্যাতু শেখানোর বহুদিন পূর্বে— আর খাদিজাকে এটা শিখিয়ে দেওয়া লাগেনি; তথাপি, তিনি পুরুষ সাহাবীদের থেকে ভালো বুঝলেন। একবার জিব্রিল (আ) রাসূল (স) এর বাড়িতে এলেন, আর তখন খাদিজাও সেখানে ছিল, জিব্রিল বললেন— বুখারির হাদিস— জিব্রিল বললেন, ও আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্‌ খাদিজার প্রতি তাঁর সালাম প্রেরণ করেছেন। তখন রাসূল (স) বললেন, "ও খাদিজা! জিব্রিল আমার কাছে এসেছে। আর তিনি আল্লাহর সালাম তোমার প্রতি প্রেরণ করছেন।" সুবহানাল্লাহ! কি সুন্দর এক হাদিস! তিনি আল্লাহর সালাম তোমার প্রতি প্রেরণ করছেন। তখন, খাদিজা উত্তর দিলেন— সুবহানাল্লাহ! লক্ষ্য করুন খাদিজার ফিকহের প্রতি, বুদ্ধিমত্তার প্রতি—তিনি বললেন, "ইন্নাল্লাহা হুয়াস সালাম। ওয়া আলা জিব্রিল আস-সালাম। ওয়া আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ আস-সালাম।" "আল্লাহ্‌ হলেন, আস-সালাম।" আমি বলতে পারি না 'আল্লাহর প্রতি সালাম, আল্লাহ্‌ আপনার প্রতিও সালাম'— আমি এটা বলতে পারি না। আল্লাহ্‌ হলেন, আস-সালাম। আমি কীভাবে বলি, ওয়ালাইকাস সালাম ইয়া আল্লাহ্‌? সেই সালাম কোথা থেকে আসবে? সুতরাং, খাদিজা (রা) ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন, কিন্তু পুরুষ সাহাবীরা বুঝতে সক্ষম হলেন না— ধর্মতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি বললেন, "ইন্নাল্লাহা হুয়াস সালাম।" আল্লাহ্‌ হলেন, আস-সালাম। জিব্রিল এর প্রতি সালাম। এবং ও রাসূলুল্লাহ, আপনার প্রতিও সালাম।
অধিকন্তু, যখন আল্লাহ্‌ হলেন আস-সালাম... আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে তাঁর ঘরে দাওয়াত দিচ্ছেন, আর তিনি তাঁর ঘরের নাম দিয়েছেন শান্তির ঘর বা দারুস সালাম। অতএব, আল্লাহর ঘর, যে ঘরে তিনি আমাদের দাওয়াত করছেন— অর্থাৎ জান্নাত— তার একটি নাম হলো দারুস সালাম। وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ - “আর আল্লাহ শান্তি-নিরাপত্তার আলয়ের প্রতি আহবান জানান।” (10:25)
এখন, কীভাবে আমরা দারুস-সালামে প্রবেশ করবো? একটাই রাস্তা আছে দারুস-সালামে প্রবেশ করার। আর তা হলো, আস-সালামের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করা। শান্তির পথ। সালামের রাস্তা। يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ - তাহলে, আল্লাহর দেখানো পথকে কুরআনে আস-সালামের পথ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাহলে, সালামের পথ আমদেরকে দারুসসালামের পথে নিয়ে যায়। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে শান্তির পথে রাখেন, যে পথ দিয়ে আমরা অবশেষে দারুস-সালাম পর্যন্ত পৌঁছে যাবো।
কীভাবে আমরা এ পথে উঠবো? নিজেকে আল্লাহর নিকট সমর্পিত করে, আল-ইসলামের মাধ্যেম। অতএব, আমরা যখন ইসলাম প্র্যাকটিস করি, আমরা সালামের পথে থাকি, যা আমাদেরকে দারুস-সালাম(জান্নাত) পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। আপনারা বুঝতে পারছেন তো?
সালামের পথে উঠার আরেকটি উপায় হলো, সবাইকে সালাম দেওয়া। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, "আমি সেই সত্ত্বার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি তোমাদের কি এমন কিছু বলব না যা তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা তৈরি করবে? "আফসুস সালামা বাইনাকুম— পরস্পরের মধ্যে সালাম ছড়িয়ে দাও।"
তাহলে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সালাম ছড়িয়ে দিতে। এই কাজের ফলে আমরা সালামের পথে থাকতে পারবো, যা আমাদেরকে দারুস-সালাম পর্যন্ত পৌঁছে দিবে।
এই কারণে প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আল্লাহর নাম আস-সালাম খুবই শক্তিশালী এক নাম। এটা আমাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি দান করে। আমাদের অন্তর যখন বিচলিত হয়ে উঠে, উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে আমাদের তখন আস-সালাম নাম ব্যবহার করা উচতি। এই নাম ধরে আল্লাহর কাছে প্রশান্তি কামনা করুন। আমরা যখন সমস্যায় পতিত হই, যখন আমরা উৎকণ্ঠিত, দুনিয়ার সমস্যা যখন আমাদের চেপে ধরে, তখন আমরা বলবো, ইয়া সালাম! ইয়া আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে সালাম(প্রশান্তি) দান করুন। কারণ, আল্লাহ্‌ হলেন আস-সালাম।
এই জন্য রাসূল (স) এর একটি দুআ ছিল— আসলে একটি দুআ নয়— প্রতিবার যখন রাসূল (স) সালাম ফিরাতেন, সালাতে যখন আসসালামু আলাইকুম বলতেন, প্রথম কোন দু'আটি তিনি উচ্চারণ করতেন? আল্লাহুম্মমা...আন্তাস সালাম। ওয়া মিনকাস সালাম। এটা সর্বপ্রথম রাসূল (স) এর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হত, প্রতিবার সালাত আদায় করার পর।
আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম। কারণ, নামাজের মত আর কোন কিছুই এতো প্রশান্তি এনে দিতে পারে না, আর কোন কিছুই মনটাকে এতো শান্ত করে দিতে পারে না। তাই, তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন, তিনি নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতেন এই বলে, ও আল্লাহ্‌! আপনিই হলেন প্রশান্তি। ওয়া মিনকাস সালাম। আপনার কাছ থেকেই প্রশান্তি আসে।
সুতরাং, আল্লাহর এই সুন্দর নাম ধরে আল্লাহকে ডেকে ডেকে আমরা নিজেদের অন্তরে প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। আর অবশ্যই প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমাদের প্রত্যেকের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, আমরা সালাম ছড়িয়ে দিবো, ইসলাম প্র্যাকটিস করবো, আস-সালামের পথে চলবো, এরফলে যখন আমরা দারুস-সালামে প্রবেশ করবো, আস-সালাম আমাদেরকে সালাম দিয়ে অভিবাদন জানাবেন। سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ - “করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াতঃ ৫৮ )
আর যখন আস-সালাম অভিবাদন জানাবেন তাঁদেরকে যারা আস-সালামের উপর বিশ্বাস এনেছিল, সালাম দেওয়ার মাধ্যমে, আস-সালাম যখন সালাম বলবেন— তখন কোনো ক্ষতি আর কোনোদিন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, যখন আস-সালাম আপনার উপর তাঁর সালাম পাঠাবেন তখন কেউ কি কোনোদিন আপনার ক্ষতি করতে পারবে? কোন মন্দ কীভাবে আপনাকে কষ্ট দিবে? যখন আল্লাহ্‌— যিনি হলেন আস-সালাম —কারো প্রতি সালাম পাঠাবেন, এটাই চূড়ান্ত। এরপর আর কোনো যন্ত্রণা কোনোদিন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এই জন্য, দারুস-সালামে যারা প্রবেশ করবে তাদের প্রতি অভিবাদন হবে সালাম— আস-সালামের তরফ থেকে। এইজন্যই তো আমরা দারুস-সালামে প্রবেশ করতে চাই। আপনি আর কোনোদিন কোনো কষ্ট, কোনো যন্ত্রণা, কোনো ক্ষতি অনুভব করবেন না। যেহেতু, দারুস-সালামে প্রবেশ করার সময় আস-সালাম আপনাকে সেই প্রশান্তি দান করেছেন।
আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা দারুস-সালামে প্রবেশ করার সময় আস-সালামের পক্ষ থেকে এই সালাম পাবে।
ওয়াস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
أنت و٥٤٣ شخصًا آخر
٧ تعليقات
١٧٤ مشاركة
أعجبني
تعليق
مشاركة

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق