الخميس، 11 مارس 2021

একটি চমৎকার উদাহরণ। (১ম পর্ব)

 

একটি চমৎকার উদাহরণ। (১ম পর্ব)
— নোমান আলী খান
আমি নিশ্চিত নই, আমি কি আপনাদের সাথে সূরাতুন নাজিয়াত (৭৯ নম্বর সূরা) থেকে কিছু শেয়ার করেছি? না, মনে হয় করিনি। না, করিনি। এই সূরা নিয়ে দুই সপ্তাহ পূর্বে একটি সিক্রেট খুৎবা দিয়েছিলাম। সিক্রেট, কারণ এটা রেকর্ড করা হয়নি। যাইহউক, আমি আল-কুরআনের নাজম নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। 'নাজম' হলো, এমন একটি সাবজেক্ট যেখানে কুরআনের আলোচ্য বিষয়সমূহ কীভাবে একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত তা অধ্যয়ন করা হয়। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয়, আলোচ্য বিষয়গুলো কেমন জানি সম্পর্কহীন। একটি অংশের সাথে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি যত্নসহকারে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, সবগুলো বিষয় একত্রিত হয়ে আসলে একটি অখণ্ড যুক্তি উপস্থাপন করছে।
তো, সুরাতুন নাজিয়াতও সেরকম একটি সূরা। অনেকগুলো শপথের মাধ্যেমে এর সূচনা হয়েছে। আল্লাহ্‌ এমন কিছুর শপথ করছেন যা টেনে নিয়ে আসে, ডুব দেয়। 'নাজিয়াত' অর্থ যা কোনো কিছু টেনে নিয়ে আসে। আর غَرۡقًا অর্থ যখন তারা ডুব দেয় বা ঝাঁপ দেয়। وَّ النّٰشِطٰتِ نَشۡطًا 'ওয়ান নাশিততি নাশতা' আর তারা দারুণ ব্যস্ত। وَّ السّٰبِحٰتِ سَبۡحًا - শপথ তাদের; যারা তীব্র গতিতে সন্তরণ করে। فَالسّٰبِقٰتِ سَبۡقًا - আর তারা ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে যায়। فَالۡمُدَبِّرٰتِ اَمۡرًا - “অতঃপর যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে।” তাদেরকে যে আদেশই প্রদান করা হচ্ছে তারা তা বাস্তবায়ন করছে।
এগুলো হলো, শপথ। আমরা জানি না কারা এইকাজগুলো করে? আল্লাহ্‌ আমাদের বলেননি তারা কারা। তিনি শুধু বলেছেন, তারা টেনে নিয়ে আসে, তারা ঝাঁপ দেয়। এখন, এর দ্বারা আসলে কী বোঝানো হচ্ছে এ বিষয়ে সাহাবাদের অভিমত পাওয়া যায়। আমরা এ নিয়ে পরে কথা বলবো।
এই শপথগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে অনেকগুলো আয়াত এসেছে বিচার দিবস নিয়ে। এমন দিন যেদিন কম্পনকারী* প্রকম্পিত করবে। یَوۡمَ تَرۡجُفُ الرَّاجِفَۃُ - تَتۡبَعُهَا الرَّادِفَۃُ - তারপর আসবে আরেকটি ভূকম্পন। قُلُوۡبٌ یَّوۡمَئِذٍ وَّاجِفَۃٌ - সেদিন অনেক হৃদয় ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। اَبۡصَارُهَا خَاشِعَۃٌ - তাদের দৃষ্টি ভীতি বিহবলতায় অবনমিত হবে। یَقُوۡلُوۡنَ ءَاِنَّا لَمَرۡدُوۡدُوۡنَ فِی الۡحَافِرَۃِ - এখন আসছে পরবর্তী দৃশ্য যেখানে এরা প্রশ্ন করছে, "তারা বলে, ‘আমাদেরকে কি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে?" অন্য কথায়, আমাদেরকে কি আবার আমাদের কবর থেকে উঠানো হবে? ءَ اِذَا کُنَّا عِظَامًا نَّخِرَۃً - "আমরা যখন পচা-গলা হাড় হয়ে যাব (তখনও)?" এই প্রত্যাবর্তন কীভাবে ঘটবে? قَالُوۡا تِلۡکَ اِذًا کَرَّۃٌ خَاسِرَۃٌ - فَاِنَّمَا هِیَ زَجۡرَۃٌ وَّاحِدَۃٌ - এরপর আল্লাহ্‌ উত্তর দিচ্ছেন, "ওটা তো কেবল একটা বিকট আওয়াজ।" এক বিকট শব্দ। আর হঠাৎ করে তোমরা অন্ধকারে পতিত হবে। فَاِذَا هُمۡ بِالسَّاهِرَۃِ - 'ছাহিরা' মানে কোথাও সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকা। অথবা, কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা যেখানে ঘুমের কোনো সুযোগ নেই।
আবারো বলছি, প্রথম বিষয় ছিল কতগুলো শপথ যেখানে কিছু একটা উৎপাটন করে নেয়া হচ্ছে, আরও বিভিন্ন কর্ম তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এরপরের বিষয় ছিল, বিচার দিবস। তারপরের বিষয় ছিল, এমন মানুষ যারা বিচার দিনের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারপর হঠাৎ করেই বলা শুরু হলো, هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی - মূসার বৃত্তান্ত তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? এরপর আরও আরও এবং আরও বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হচ্ছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে দেড় পৃষ্ঠার মধ্যে প্রায় ছয়টি পৃথক বিষয়ের আলোচনা করা হচ্ছে। মনে হয় যেন একটার সাথে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু, আসলে, এইসবগুলো বিষয়ের মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকার একটি যুক্তি বোনা হচ্ছে। এটাকে বলতে পারেন আল-কুরআনের সূচিকর্ম বা এমব্রয়ডারি।
প্রথম আয়াতে আসলে দুটি চিত্র একইসাথে বর্ণনা করা হচ্ছে। আরবিতে নাযিয়াত, আদিয়াত, আল-আসিফাত ইত্যাদি শব্দগুলো দিয়ে আসলে ঝড়, অশ্বের ছুটে চলা বোঝানো হয়। বেশিরভাগ সময় এগুলো দিয়ে এমন মানুষদের বোঝানো হচ্ছে যারা কোনো লোকালয় আক্রমণ করতে যাচ্ছে। আগেরদিনের আরবরা ছড়ানো ছিটানো গ্রামে বা ক্যাম্পে বাস করত। তখন, আক্রমণকারী ডাকাত দল ঘোড়া নিয়ে ভোর বেলা এসমস্ত লোকালয়ে আক্রমণ চালাত। যখন চতুর্দিক শান্ত থাকতো। অশ্বারোহীরা আগমন করার সময় ঘোড়ার লাগাম ধরে টান দিত, যারা টান দেয়, এভাবে টানতে টানতে তারা ক্যাম্পে ঝাঁপিয়ে পড়তো। ওয়ান নাযিয়াতি গারকা। তখন তারা খুবই ব্যস্ততার সাথে ছুটত। কারণ, তাদেরকে একটার পর একটা তাবুতে লুটতরাজ চালাতে হত। ওয়ান নাশিততি নাশতা। তারা দ্রুত কর্ম শেষ করে যেভাবে সহজে এসেছিল সেভাবে সহজে পালিয়ে যেতো। ওয়াস সাবিহাতি সাবহা।
আর পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা আসলে ধীরে ধীরে পালাত না, তারা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে দ্রুত পালিয়ে যেতো। কারণ, লোকালয় থেকে তাদেরকে দ্রুত সরে পড়তে হবে। فَالسّٰبِقٰتِ سَبۡقًا - আর যখন তারা কাজ শেষ করত, আদেশের বাস্তবায়ন করত— অন্য কথায়, লুণ্ঠন করে তারা মালামাল সংগ্রহ করলো; এখন, তারা এগুলো নিজেদের মাঝে বণ্টন করতে লাগলো।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেও নজর দেয়া যায় সম্পূর্ণ প্রথম চিত্রটার দিকে।
ভিন্ন আরেকটি দৃষ্টিকোণ হলো, সালাফদের দৃষ্টি। তারা বলেন, ফেরেশতাদের কর্তৃক মানুষের শরীর থেকে রূহ টেনে নেয়ার কথা এখানে বলা হয়েছে। সম্ভবত, আপনারা আগে এ কথা শুনেছেন। ফেরেশতারা শরীরের ভেতর ডুব দেয় এবং রূহ টেনে নিয়ে আসে। কিন্তু, এখানে আসলে দুইটি চিত্র একইসাথে তুলে ধরা হয়েছে। আপনাদের বলছি, কীভাবে।
আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আখিরাতের কথা বর্ণনা করতে যাচ্ছেন এবং হঠাৎ করেই কীভাবে এর আবির্ভাব ঘটবে সেকথা বলতে যাচ্ছেন। তোমাদেরকে কোনো সতর্ক সংকেত দেয়া হবে না। আরবরা তখন বলতো, কোনো সতর্কতা জারি করা হবে না বলে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন? তখন আল্লাহ্‌ বলছেন ঠিকাছে, তোমাদেরকে আমি এমন একটি দৃশ্যের উদাহরণ দিচ্ছি যা তোমরা কল্পনা করতে পারো। দৃশ্যটি হলো, যখন তারা রাতের বেলা হঠাৎ করে আক্রান্ত হতো। ঠিক যেমন ফেরেশতারা হঠাৎ করে এসে রূহ টেনে নিয়ে যাবেন। ফেরেশতারা খুব ভালোভাবেই জানেন কী করতে হবে। তাঁরা আকাশ থেকে সাঁতার কাটার মত ভাসতে ভাসতে নেমে আসবেন, ঠিক যেভাবে অশ্বারোহী ডাকাতেরা মরুর বুক চিরে এগিয়ে আসে। ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন করবেন যেভাবে অশ্বারোহীরা এসে তাদের সর্দারের আদেশ বাস্তবায়ন করবে।
আর আকস্মিকভাবে এটা ঘটে। কেউ তো আর অশ্বারোহী ডাকাতের জন্য অপেক্ষা করে না। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে তাদের আগমন ঘটে। এরপর তিনি বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে বললেন, ঠিক এভাবেই কিয়ামতের ভূকম্পন প্রকম্পিত করবে। یَوۡمَ تَرۡجُفُ الرَّاجِفَۃُ - সেদিন ভূকম্পন প্রকম্পিত করবে। তারপর আসবে আরেকটি ভূকম্পন। ঠিক যেভাবে আক্রমণকারীরা ঢেউয়ের মত একের পর এক আসতে থাকে। প্রথম দলের আক্রমণ শেষ হতেই পরবর্তী দলের আগমন ঘটে। تَتۡبَعُهَا الرَّادِفَۃُ -
দৃশ্যটি আপনাদের মাথায় কল্পনা করুন যেখানে গ্রামবাসীরা আক্রান্ত হচ্ছে, মাঝরাতে অশ্বারোহী ডাকাতেরা গ্রামে লুটতরাজ চালাচ্ছে, তখন মানুষ কী করে? قُلُوۡبٌ یَّوۡمَئِذٍ وَّاجِفَۃٌ - اَبۡصَارُهَا خَاشِعَۃٌ - তাদের অন্তর ভয়ে প্রকম্পিত। তাদের দৃষ্টি ভীতি বিহবলতায় অবনমিত। এরমধ্যে লুণ্ঠনের কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। লুণ্ঠন শেষ মানে মূল্যবান যা কিছু আছে সব তারা নিয়ে গেছে। আর মাটিতে যা পড়ে আছে মূলত অশ্বারোহীদের পদচিহ্নগুলো। তাই না? জানেন? পদচিহ্নের আরবি প্রতিশব্দ কী? الۡحَافِرَۃِ 'হাফিরা' یَقُوۡلُوۡنَ ءَاِنَّا لَمَرۡدُوۡدُوۡنَ فِی الۡحَافِرَۃِ - একদিকে এর অর্থ হলো, তারা বলে, ‘আমাদেরকে কি কবর থেকে তুলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে? আর এর আরেকটি অর্থ হলো, অশ্বারোহীরা চলে যাওয়ার পর বাকি আছে শুধু পদচিহ্নগুলো। কোন কারণে কেউ সেখানে আবার ফিরে যাবে? আর ফিরে গেলেও উপকারী কিছু সেখানে পাবে না। تِلۡکَ اِذًا کَرَّۃٌ خَاسِرَۃٌ - ‘এটা হবে এক ক্ষতিকর প্রত্যাবর্তন’।
অন্যকথায়, তাদের বিচার দিবসের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলাকে আল্লাহ্‌ তুলনা করছেন এমন একটি দৃশ্যের সাথে যেটা নিয়ে তারা ভাবত— লোকালয় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর কীভাবে তারা সেখানে ফেরত যাবে? فَاِنَّمَا هِیَ زَجۡرَۃٌ وَّاحِدَۃٌ - ওটা তো কেবল একটা বিকট আওয়াজ। এই বিকট শব্দ হতে পারে শিঙ্গার ফুঁৎকারের মহাগর্জন, কিয়ামতের দিন। وَنُفِخَ فِي الصُّورِ - এবং শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। (৩৯:৬৮)
এই দুনিয়ায় এক ব্যক্তি তার গ্রামে ফেরত এসে দেখল সবকিছু জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। চারিদিকে শুধু ঘোড়ার পদচিহ্ন। তখন সে কী করে? সে কেঁদে উঠে। হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়ে। فَاِذَا هُمۡ بِالسَّاهِرَۃِ - সারা রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দেয়। কারণ, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
আল্লাহ্‌ দুনিয়ার একটি চিত্রকে আখিরাতের চিত্রের সাথে তুলনা করলেন। সুতরাং, আপনি দুইটি চিত্র একইসাথে অবলোকন করছেন।
এখন, এই সকল দুর্যোগ এড়ানো যেতো। যদি কেউ গ্রামবাসীকে বলতো যে, ডাকাত-দল আক্রমণ করতে আসছে। তোমাদের গ্রামে একটি আক্রমণ হতে যাচ্ছে। তারা প্রস্তুতি নিতে পারতো, তাই না? এরপর আল্লাহ্‌ কী বললেন? هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی - মূসার সংবাদ কি তোমাদের কাছে আসেনি? আল্লাহ্‌ মূসাকে তাঁর কাছে ডেকে আনলেন, যেন তিনি ফেরাউনের কাছে গিয়ে তাকে সাবধান করতে পারেন। اِذۡهَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی - ফেরাউনের কাছে যাও, সে সীমালঙ্ঘন করেছে।
... ইনশাআল্লাহ্‌ চলবে।
مثال رائع. (الجزء 1)

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق