السبت، 4 ديسمبر 2021

তাঁর পরিকল্পনায় আস্থা রাখুন (দ্বিতীয় পর্ব) —নোমান আলী খান

 

তাঁর পরিকল্পনায় আস্থা রাখুন (দ্বিতীয় পর্ব)
—নোমান আলী খান
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি (র) অসাধারণ সুন্দর একটি কথা বলেছেন। এটা আমার মাথায় বদ্ধমূল হয়ে আছে যুবক বয়সে যখন প্রথম শুনেছিলাম তখন থেকে। যার সত্যিকারের জ্ঞান রয়েছে তিনি তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন— "একটি গাছে যখন ফল ধরে তখন এর ডালপালাগুলো নুয়ে পড়ে।" গাছে ফল ধরলে ডালপালাগুলো নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ব্যাপারটা হলো— নিজের ভেতরে যদি সত্যিকারের জ্ঞানের ফল ধারণ করে থাকেন তখন বিনম্রতা আপনাকে প্রভাবিত করবে। আপনি নম্র হয়ে নুয়ে পড়বেন। নিজেকে আপনার বড় কিছু মনে হবে না। কেউ যদি আপনার জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আপনার সমালোচনা করে নিজের মাথায় তখন আপনি এভাবে ভাববেন না- আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করার তুমি কে!! এক্সকিউজ মি, তুমি কী জানো!! তোমার কোনো বক্তব্য কি ইউটিউবে আছে? তুমি এসেছ আমাকে প্রশ্ন করতে!!
আপনি এভাবে চিন্তা করবেন না। এভাবে আমি চিন্তা করবো না। আমরা বরং চিন্তা করবো 'আব্দান মিন ইবাদিনা'-র মত।
এখন, মূসা (আ)-কে কিতাবের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছিল। তাঁকে ঐশী জ্ঞান প্রদান করা হয়েছিল। এটা আমার খুৎবার পরবর্তী অংশ যা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। মূসা (আ)-কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল, যা ছিল আল্লাহর বাণী। এটা ছিল সে সময়ের কুরআন। এমনকি কুরআনের এক স্থানে এটাকে অন্য একটি কুরআন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এরকম একটি কিতাব তাদের দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং, তিনি আল্লাহর কালাম শিখেছিলেন। তাহলে কিভাবে তিনি আল্লাহর বাণী থেকে গভীর বা ভিন্ন কিছু শিখবেন? তিনি তো ইতোমধ্যে আল্লাহর বাণী শিখেছেন। তাহলে কিভাবে তিনি অন্য একজনের কাছ থেকে শিখবেন।
দেখুন, দুই ধরণের জ্ঞান আছে। দুই প্রকারের জ্ঞান আছে। একটা হলো— আল্লাহর বাণীর জ্ঞান। আর অপরটি হলো— বাস্তবতার জ্ঞান। আমরা এ ঘটনা থেকে এই দুই ধরণের জ্ঞান সম্পর্কে শিখবো। তাহলে একটা হলো আল্লাহর কালামের জ্ঞান, আরেকটা হলো বাস্তবতার জ্ঞান। কেউ যদি গভীর জ্ঞান অর্জন করে, গভীর উপলব্ধি অর্জন করে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে— তার মানে এটা নয় যে, উক্ত ব্যক্তি বাস্তবতার জ্ঞানেও সত্যিকার অর্থে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করে ফেলেছে। এগুলো সম্পূর্ণ আলাদা দুইটা বিষয়।
যার কাছ থেকে তিনি জ্ঞান আহরণ করতে যাচ্ছেন তাঁকে অন্য ধরণের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে— বাস্তবতার জ্ঞান। তাঁকে সে ধরণের জ্ঞান দান করা হয়েছে। কিতাবের জ্ঞান নয়। কিতাবের জ্ঞান দেয়া হয়েছে মূসা আলাইহিস সালামকে। আর এটা গভীর জ্ঞান, সর্বোচ্চ জ্ঞান। কিন্তু এটা হলো ভিন্ন ধরণের জ্ঞান।
আরেকটা কারণে আমি বিষয়টার উপর গুরুত্ব দিতে চাই যে, কেন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা তার বিনম্রতার কথা প্রথমে উল্লেখ করেছেন এতো জোর দিয়ে এবং এরপর যোগ করেছেন- اٰتَیۡنٰهُ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ عَلَّمۡنٰهُ مِنۡ لَّدُنَّا عِلۡمًا - এই অংশটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
প্রথমে বলা হলো— সে (খিজির আলাইহিস সালাম) শুধুই আমার দাসদের মাঝে একজন দাস। এটুকুই। সে আমার গোলামদের মাঝে একজন গোলাম মাত্র। দ্বিতীয় ব্যাপার হলো— আল্লাহ বিশেষভাবে তাকে রহমত দান করেছেন। এরপর বললেন— "আর আমার পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম।" অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে এমন জ্ঞান দান করেছেন— যে জ্ঞান কেউ তাকে কোনোদিন শেখাতে পারতো না। তাকে এমন কিছু বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছিল, বাস্তবতার জ্ঞান। তিনি বাস্তবতাকে এমনভাবে দেখতে পেতেন যেভাবে আমরা কোনোদিন দেখতে সক্ষম হবো না। এই জ্ঞান বিশেষভাবে তাকে প্রদান করা হয়েছিল।
এখন, যে ব্যাপারটাতে আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই তা হলো— আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা প্রথমে তাকে রহমত দান করেছেন, জ্ঞান দেওয়ার আগে। প্রথমে রহমত, পরে জ্ঞান। " اٰتَیۡنٰهُ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ عَلَّمۡنٰهُ مِنۡ لَّدُنَّا عِلۡمًا "
এই ব্যাপারটা কেন গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ তাকে রহমত দান করেছেন? বিশেষভাবে আল্লাহ তাকে রহমত দান করেছেন।
আরবিতে এটাকে বলা হয় 'আতফ বায়ান'। এমন ধরণের কিছু জ্ঞান আছে আপনাকে যদি তা দেওয়া হয়, আপনার প্রতি এর চেয়ে বড় কোনো রহমত আর হতে পারে না। যদি এগুলো জানা থাকে, আপনার জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। যদি এগুলো জানা থাকে, সুখী হয়ে যাবেন। যদি এগুলো জানেন, আপনার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এরচেয়ে বড় রহমত আর কি হতে পারে যে আপনার অন্তর আর অশান্ত হবে না! আপনি আর উদ্বিগ্ন হবেন না। আর দুঃখিত হবেন না। আর বিরক্ত হবেন না। সর্বদা আশীর্বাদপুষ্ট জীবন যাপন করবেন। কারণ, আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে আপনাকে বিশেষ রহমত দান করেছেন। আর সেই রহমতটি কী? বাস্তবতা সম্পর্কে বিশেষ ধরণের কিছু জ্ঞান। এই ধরণের জ্ঞান খিজির (আ)-কে দেয়া হয়েছিল। যা তাঁর জন্য রহমতে পরিণত হয়।
এখন, কিভাবে এটা কাজ করে? আবারো বলছি, আমি আপনাদের পুরো ঘটনা বলতে যাচ্ছি না। বাসায় গিয়ে যখন সূরার অনুবাদ পড়বেন বা তাফসীর পড়বেন, তখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে মূসা (আ) এর সাথে সেই ভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছেন, মূসা (আ) তার সাক্ষাৎ পেয়ে তাকে বললেন— عَلٰۤی اَنۡ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدًا - আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি? যেন আপনাকে যে বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে তার থেকে কিছু বিষয় আমাকে শেখাতে পারেন। (18:66)
তখন শুরুতেই তিনি মূসা (আ) কে বললেন— এর জন্য আগে আপানাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, আপনার সেগুলো নেই। যেমন, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হলে আমাদেরকে আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, সেরকম। আমাকে অনুসরণ করার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা হলো সবর। আপনার সেটা নেই। اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا - ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না।’ (18:67) আপনার পক্ষে নিজেকে থামিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আপনি সংযম ধরে রাখতে পারবেন না। এই সাবজেক্টটা একটু বেশি কঠিন।
কি! মূসা (আ) নিজেকে এটা হ্যান্ডল করতে পারবেন না! তিনি ফেরাউনকে হ্যান্ডল করতে পেরেছিলেন। তিনি পানি অতিক্রম করা হ্যান্ডল করতে পেরেছিলেন। তিনি বনী ইসরাইলের মত বেয়াড়া জাতিকে পরিচালিত করতে পেরেছিলেন। তিনি ইতোমধ্যে অনেক কিছু হ্যান্ডল করেছেন। যে মানুষেরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তিনি তাদের হ্যান্ডল করেছেন। আর খিজির (আ) বলছেন আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরে রাখতে পারবেন না।
ইনি হলেন সে মূসা (আ) যিনি ইসরাইলীদের বলেছিলেন ধৈর্য ধারণ করতে। তিনি তাদের বলেছিলেন যখন ফেরাউনের বাহিনী তাদের ধাওয়া করছিল- "کَلَّا ۚ اِنَّ مَعِیَ رَبِّیۡ سَیَهۡدِیۡنِ" - না, না। সমস্যা নেই। আমার রব আমার সাথে আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। (২৬:৬২)
ইনি হলেন ইসলামের হিরো। কুরআনে সবচে বেশি গুরুত্ব দেয়া নবীদের মাঝে অন্যতম। আর এই লোকটি মূসা (আ) কে বলছেন আপনার যথেষ্ট সবর নেই, এই কাজের জন্য। আপনি এটা হ্যান্ডল করতে পারবেন না। সুবহানাল্লাহ! শুধু একবার চিন্তা করে দেখুন, কাকে এই কথা বলা হচ্ছে!! এই কথা মূসা (আ)-কে বলা হচ্ছে!!
যাইহোক, মূসা (আ)-কে যখন এ কথা বলা হলো তিনি বিনম্রতার সাথে বললেন- سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ صَابِرًا - ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। (১৮:৬৯) এটা একটা নম্র জবাব। তিনি এভাবে বলেন নি, এক্সকিউজমি মি! আপনি আমাকে সবর শেখাতে এসেছেন! শুনেন তাহলে আমার কত ধরণের সবরের অভিজ্ঞতা আছে।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق