الخميس، 26 مايو 2016

ক্ষমার মাস রামাদান : পর্ব - ০২


ক্ষমার মাস রামাদান : পর্ব - ০২
তাই আমার প্রিয় তরুণ প্রজন্ম, যদি আপনি রোজা রেখে বাসায় আছেন আর বসে বসে সিনেমা দেখছেন, তাহলে আপনি আসলে রোজা রাখছেন না। আপনি রোজা রাখছেন না। কারণ আপনার অন্তর এখনো আপনার ভুল আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে হার স্বীকার করছে। রোজা রাখার এই অনুশীলনটার উদ্দেশ্যই হল যে আপনি প্রতিনিয়ত মনে করবেন যে যেভাবে আমি আমার ক্ষুধা, তৃষ্ণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, আমাকে আমার চোখের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার মুখের (কথার) বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার জিহবার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার হরমোনের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে এখন আমার সবকিছুর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। এর মাঝে দৃশ্যমান তা হল খাওয়া আরা পান করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু আর সবকিছুও রোজার মাঝে রয়েছে।‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’। আশা করা যায় তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারবে। এই জিনিসটাই যদি আমাদের মনে না থাকে তাহলে বনী ইসরাইলের সাথে আমাদের আর কোন পার্থক্য থাকছে না। তারাও রোজা রাখতো, কিন্তু তাদের মাঝে কি ছিল না? তাদের তাকওয়া ছিল না, কিন্তু তারাও রোজা রাখতো। আপনি যদি এটাই ভুলে যান যে কেন আপনি রোজা রাখছেন তাহলে আপনি তাই করছেন যা বনী ইসরাইল করতো। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, কুতিবা আলাইকুম আসসিয়াম। আলাইকুম ‘মুকাদ্দাম’, বলা হয় জার মাজ রুর মুকাদ্দাম বিশেষত তোমাদের উপর, এখন তোমাদের পালা। আমি তোমাদেরকে তাই দিচ্ছি, যা আগের প্রজন্মের ওদেরকেও দিয়েছিলাম, তারা এর থেকে কোন উপকার পায়নি, তারা তাকওয়া অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, আশা করি যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ এটাই বলছেন। যখন আমাদের উপর রোজা ফরয করছেন এটাই বলছেন। মানুষ যখন রোজার কথা চিন্তা করেন তখন কোন জিনিসটা প্রথম তাদের মাথায় আসে? তারা ইফতারের কথা চিন্তা করে। তারা ইফতারের কথা চিন্তা করে।
রোজা হচ্ছে বাস্তব জীবন মোকাবেলা করার জন্য আপনার জন্য প্রশিক্ষণ, আরেকটি কথা, আমি আগেও বলেছি, যখন প্রশিক্ষণ চলে সেটা অনেক সহজ থাকে, যেমনঃ ‘নিয়ন্ত্রিত আগুন’। ‘নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি’। আল্লাহ কি করছেন? আল্লাহ কি রামাদানের রোজাকে সহজ করেননি? কারণ উনি শয়তানকে বন্দী করে রাখেন। আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। রাখেন না? উনি আমাদের কাজ সহজ করে দেন। যাতে আপনার অন্তর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার একাট সু্যোগ পায়। যাতে সে আরো পরিশুদ্ধ হতে পারে আসল পরীক্ষায় পড়ার আগে। যেই মাত্র রামাদান শেষ হয়, ‘ঈদ মুবারক’ বলুন তো কি হবে, ‘শয়তান মুক্ত’। আর আসল যুদ্ধ তখন শুরু হচ্ছে। এতদিন ধরে যেই প্রশিক্ষণ নিলেন সেটা এখন কাজে দিবে, কিন্তু যদি আপনি নিজেকে ঠিকমত প্রশিক্ষিত না করেন, অ্যা...।। দেখ, শুধু তরুণ প্রজন্মকে সাহায্য করার জন্য বলছি, যা বলব এটা বিশেষত তরুণ দের জন্য। কেউ যখন আর্মিতে যোগ দিতে চায় তাকে শারীরিক প্রশিক্ষণ এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তারা তাকে কোন দেয়ালের উপর দিয়ে লাফ দিতে বলে, অথবা দেয়াল বেয়ে উঠে অন্যদিকে যেতে বলে। এখন ধরুন দুই জন লোক মিলিটারিতে যোগ দেবার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, একজন দেয়ালের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে গেল, আর আরেকজন পাশ দিয়ে হেঁটে ওইপাশে গেল। তারা দুজনই অন্যপাশে গেল, ধরা যাক এই কাজ তোমাকে দশ বার করতে হবে, একজন ১০ বার লাফ দিয়ে গেল, আরেকজন ১০ বার পাশ কাটিয়ে গেল, এখন তারা যখন আসল রণ ক্ষেত্রে যাবে এবং তাদেরকে একটি দেয়াল ডিঙ্গাতে হবে, কে যেতে পারবে, আর কে পারবে না? বোঝা গেল? তারা দুইজনেই বলতে পারে, আমিই আমার টাস্ক শেষ করেছি আমি ফিনিশ লাইনে পৌছেছি। সবাই তাই চায়, ফিনিশ লাইনে পৌছাতে। আপনিও রোজা রাখবেন, আপনার ভাইও রোজা রাখবে। কিন্তু আপনাদের দুইজনের রোজা সমান হবে না। এক হবে না। যে ছেলেটি সত্যই নিজেকে প্রশিক্ষিত করেছিল আর যে করেনি তারা তো একই ফল পাবে না। এখন সামনে আগাই।
আল্লাহ বলছেন ‘আইয়ামাম মা’দুদাত’, তার মানে খুব অল্প কিছু দিন, জানেন এর মানে কি? যেই আয়াতটি সম্পর্কে আলোচনা করলাম সেটা রামাদানের আয়াত নয়, এখনো রামাদানের কথা আসেনি, মা’আদুদাত শব্দটি দিয়ে বোঝায় ‘জাম্মু কিল্লাহ’, যার মনে হল, ১০ এর নিচে, এর মানে ৯ বা তারও কম। এর মানে এই আয়াতটি আগেকার যে রোজা ছিল সেটার কথা বলছে।রামাদানের আগের রোজা, যেটা ইহুদীরা যেই দিনে করতো সেই দিনেই ছিল। অথবা হয়তো মাসের মাঝখানের তিনটি দিন। এক কথায় অল্প কিছু দিন। আল্লাহ বলছেন আমি তোমাদের উপর রোজা ফরয করছি যেমন করেছিলাম পূর্ববর্তী নবীদের উপর। মানে একদম তাদের মতই, এমনকি তারা যেই দিনে করতো সেই দিনেই। أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ যদি তারা তা করতে না পারে, সেই সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তারা কোন গরীব লোককে খাওয়াবে। এখন আমি আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, মনোযোগ দিয়ে শুনুন, রামাদানের বিধান আসার পূর্বে যদি রোজা করতে অসমর্থ হতেন, তাহলে দুই উপায়ে সেটা পূরণ করতে পারতেন। আল্লাহ মুসলিমদেরকে কি বলছেন, যে তোমরা দুইটি কাজ করতে পারবে। কি সেই দুইটা আপনারা বলুনঃ প্রথমটি হলঃ আপনি যদি রোজা রাখতে না পারেন তাহলে আপনি কি করবেন? আপনি ওইটা পূরণ করে নিতে পারেন, আর দ্বিতীয় সেই কাজটি করতে পারেন তা হলঃ গরীবকে খাওয়ানো। দুইটা অপশন। দুই উপায়ে আপনি এটার কাফফারা আদায় করতে পারেন। কিন্তু এই দুই উপায়ে কাফফারা দেবার বিধান কি রামাদানের বিধানের আগে ছিল নাকি পরে? না না না, এটা রামাদান আসার পূর্বে ছিল। এই আয়াত রামাদান সম্পর্কিত নয়, এই আয়াত হচ্ছে, মুসলিমরা এখনো রামাদান সম্পর্কে জানেই না। তারা শুধু জানে রোজা রাখা যায়, যেভাবে ইহুদীরা রোজা রাখতো।আপনি যদি ওই কয়দিনের রোজা রাখতে না পারেন তাহলে আপনি সেটা পূরণ করে নিতে পারেন পরবর্তীতে নিজে রোজা রেখে অথবা গরীব কাউকে খাইয়ে। আচ্ছা ঠিক আছে। ’এখন আপনি যদিও গরীব কাউকে খাইয়েও সেটার কাফফারা আদায় করতে পারেন, আবার নিজেও রাখতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি নিজে রাখেন সেটাই আপনার জন্য ভাল। ওইটাই ভাল, যদিও আমি দুইটা পথই খোলা রেখেছি, তুমি নিজে রাখতে পারলেই সবচেয়ে ভাল। কিন্তু আপনি যদি গরীব খাইয়েও সেটা পূরণ করেন তাতেও কোন দোষ নেই। সাহাবাদের সময়ে উনারা এটাই পালন করতেন। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। আচ্ছা এখন আসছে রামাদানের কথা, আমি চাইছিলাম আপনারা প্রথমে এর পটভূমিটা বুঝুন। যখন মুলসিমরা প্রথম রোজার কথা শুনলো, সাহাবারা (রাঃ) যখন রোজার কথা জানতো তা ছিল ১০ দিনের কম সময়। এটা হল প্রথম কথা। আর দ্বিতীয়ত এই রোজা যদি কেউ করতে অসক্ষম হত তাহলে তা পূরণ করার দুইটি বিধান ছিল, আপনি যদি পারেন তাহলে সেটা নিজেই রেখে পূরণ করতে পারেন কিন্তু আপনার জন্য আরেকটি বিধানও রয়ে গেছে। এখন আল্লাহ বলছেন ‘শাহরু রামাদান’, ‘রোজার মাস’ পরের আয়াত, এটি হচ্ছে কুরআনে রামাদানে রোজা রাখা বিষয়ক একমাত্র আয়াত। একমাত্র এটিই । ‘الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ’।
আগেও বলেছি যখন মানুষ রামাদানের কথা চিন্তা করে প্রথম কোন জিনিসটা তাদের মাথায় আসে? ইফতার, পাকোড়া, সমুসা, বাসায় যথেষ্ট কেচাপ আছে কিনা সেটা দেখতে হবে, আপনি অতিরিক্ত অনেক সোডা জাতীয় জিনিস কিনবেন, মুসলিমরা আসলে রামাদানের সময় ওজন কমায় না বরং আমরা ওজন আরো বাড়াই। এটাই আমাদের নিয়ম। এমনকি যদি রোজার কথাও ভাবেন, যখন আপনি রমজান মাসের কথা ভাবেন প্রথম যেই জিনিসটি আপনার মাথায় আসে তা হল রোজা রাখা, যদি আপনি খাবারের কথা চিন্তা নাও করেন তাও আপনি হয়তো রোজার কথা অবশ্যই ভাবেন। আপনারা বলেন ‘ভাই এই বছর রামাদান তো গরমের মাঝে, কি হবে কে জানে’ আপনার মাথায় শুধু এই ধরনের চিন্তায় আসে। আল্লাহ কুরআনে বলছেন, প্রথম যেই জিনিসটা রামাদান শব্দ শুনলেই আপনার চিন্তা করার কথা তা হল ‘شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ’ আল্লাহ এটা বলেননি যে আল্লাহ তাতে রোজা ফরজ করেছেন বলেছেন الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ সেই মাস যাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল। রামাদান সেই মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল। যেই কারণে রামাদান একটি বিশেষ মাস তা রোজা নয়, রামাদান এই কারণেই বিশেষ কারণ এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছিল, আল্লাহ এটিই আমাদেরকে বলছেন। এখন আপনার নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আপনি রামাদানে রোজা রাখছেন, কিন্তু আপনি কুরআন পড়ছেন না, আপনি রামাদানে রোজা রাখছেন কিন্তু পুরো ৩০ দিনে এক পাতা কুরআনও আপনি মুখস্ত করেননি, এক পাতা থাক এমনকি আধা পাতাও নয়, এমনকি দুইটা আয়াতও নয়, আপনি কুরআন থেকে কিছুই মুখস্ত করেননি, তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে কি বলছেন? রামাদানের পুরো উদ্দেশ্যটাই ছিল, কুরআনের নাযিল হওয়াটা উদযাপন করা। আমি আগেও বলেছি একটি জাতির জন্য প্রথম যেই জিনিসটা দরকার তা হল রাজধানী, এখন নতুন রাজধানী কি? কাবা। দ্বিতীয়ত যেই জিনিসটা দরকার একটি জাতির জন্য তা হল সংবিধান, আর আমদের সংবিধান কি? কুরআন। আর যখন সংবিধান যখন লিখিত হয় আর অনুমোদিত হয়, প্রত্যেক জাতি তা উদযাপন করে। প্রত্যেক জাতি যাদের সংবিধান আছে, তাদের একটি সংবিধান দিবস ও আছে, যে দিন তাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল, আছে সবার এরকম দিবস। ঠিক আছে? আমাদের সংবিধান নাযিল হয়েছিল, রামদান মাসে, আল্লাহ আমাদেরকে শুধু একদিন দেননি উদযাপন করার জন্য উনি আমাদেরকে পুরো ৩০ টা দিন দিয়েছেন কুরআনের অবর্তীণ হওয়া উদযাপন করার জন্য। রামাদান মাস এটারই উদযাপন যে আল্লাহ আমাদেরকে এক উম্মাহ করেছেন। এখন আমাদের নিজস্ব রাজধানী আছে, নিজস্ব সংবিধান আছে, এবং আমাদের নিজস্ব রোজা রাখার দিন আছে। ইহুদীরা যেই দিনে রোজা রাখতো এটা আর সেই দিনে নেই। আর আইয়াম্মাম মাওদুদাত নয়, শাহরু রামাদান। তাদের শাহর(মাস) রামাদান ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদেরকে পূর্ববর্তী জাতি থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলেছেন। শেষ এটা। তাই আপনি যদি নিজেকে ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাধিনা আমানু’ এর অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার নামাজের দিক পরিবর্তন করতে হবে, আপনাকে আপনার রোজা রাখার দিন পরিবর্তন করতে হবে। আপনার আর কোন অপশন নেই। এর আগে বলা হয়েছিল, ‘ওয়ারকাউ মাররাকিয়িন’ আপনাকে বলা হয়েছিল যারা রুকু করে তুমি তাদের মত রুকু কর, এবং এতে তাদেরও কোন সমস্যা ছিল না। কেন? কারণ এখনো রুকুর দিক একই ছিল, কিন্তু এখন এটা পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন এটা শেষ।
ও এই ফাকে আরেকটি কথা বলে রাখি, সম্প্রতি আমার একজন রেবাই বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল, টেক্সাসে। সে জুডিক স্টাডির একজন গবেষক। আমি তার সাথে মুসা (আঃ), আরো নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা ইবাদত কর কিভাবে, তোমরা কি রুকু দাও? কারণ কুরআন ইহুদীদের সম্পর্কে বলছে, ‘ওয়ারকাউ মাররাকিয়িন’,(রুকুকারী) আল্লাহ বলেননি ‘ওয়াসজুদু মায়াসসাজিদীন, সাল্লু মাআল মিসাল্লিন’(সিজদাকারী...) আল্লাহ বলেছেন ‘ওয়ারকাউ মাররাকিয়িন’, কেন আল্লাহ ইহুদীদেরকে এটা বললেন, তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা রুকু কর? আমি জানি তাদের সিজদা আছে, রুকু আছে। তো সে বললঃ আমাদের কিছু রুকু আছে যেটা আমরা বছরে একবার করি, এক সময় এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার ছিল, আমি জানতে চাইলাম তোমাদের সিজদা আছে? সে বলল হ্যাঁ আমাদের সিজদা ছিল, যাতে আমরা মাটিতে মাথা নত করতাম, এখন আমরা আরেকটা ইবাদত করি যাতে আমরা ফরিয়াদ জানাই যে কেন এটি আমরা এখন করি না। ইয়া সালাম!! আমি এটা বানিয়ে বলছি না, সে আমাকে বলেছে এটা, একজন রেবাই আমাকে এটা বলেছে, অর্থাৎ তারা সিজদা জিনিসটা একদম হারিয়ে ফেলেছে আর কিছু রুকু এখনো তারা করে। ‘ওয়ারকাউ মাররাকিয়িন’ সে আরো যেটা আমাকে বলেছিল তাহলো তাদের ইবাদতের শেষ ভাগটা হচ্ছে রুকু। মানে সেজদা আগে দেয় আর তারপর রুকু দিত। মানে তারা যদি সিজদা করে তাহলে আগে সিজদা করে তারপর রুকুতে যায়। আল্লাহ মরিয়াম (আঃ) কে কি বলেছেন, ওয়াসজুদি ওয়ারকায়ি, কারন তাদের ইবাদতে সিজদা আগে আর রুকু পরে। যাই হোক আমরা আবার আমাদের রামাদানের বিষয়টাতে ফিরে আসি, শাহরু রামাদান, আল্লাধি উনযিলা ফিহিল কুরআন।
এরপর আল্লাহ বলেছেন হুদাল্লিলন্নাস।(মানুষের জন্য পথনির্দেশনা) আয়াতের এই অংশটা আমাদের অনেকটা মনে হচ্ছে মুখে একটা চড় খাওয়ার মত অবস্থা। কারণ তিনি বলেছেন কুরআন সকল মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক, এই আয়াত শুধু মুসলিমদের জন্য না, এটা মদীনার ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্যও, তারা ভাবে যে যখন ওহী আসে সেটা কাদের জন্য আসে? শুধু তাদের জন্য।আল্লাহ বলছেন না এই বার ওহি শুধু তোমাদের জন্য না, এটা সমগ্র মানবজাতির জন্য, হুদাল্লিলন্নাস। আল্লাহ এটাও বলেননি যে হুদাল্লিল আরব, হুদাল্লিল বনী ইসরাইল, হুদাল্লিল বনী ইসরমাইল, হুদাল্লিল বনী ইব্রাহীম, না না না, এটা সমগ্র মানবজাতির জন্য। এটা আমাদের ধর্মের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস বলা যায়। আমাদের ধর্মের সবচাইতে সুন্দর জিনিস। আপনি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায়, বা খালিজে বা পাকিস্থানে যে জায়গাতেই কোন মসজিদে যান না কেন, যত জাতির মানুষই থাকুক না কেন, সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়, এমন কোন ভেদাভেদ করা হয় না যে সবচেয়ে ধনীরা সামনের সারিতে, মধ্যবিত্তরা মাঝের সারিতে, সুইপার শেষ সারিতে না, না এরকম করা হয় না। সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়, হতে পারে বস আর কর্মচারী একই সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এমনও হতে পারে, কর্মচারী প্রথম কাতারে, বস শেষ কাতারে। এটাও হতে পারে। এমনও হতে পারে যেই লোক আপনার জন্য কাজ করে সে ইমামতি করছে আর আপনি তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে অনুসরণ করছেন। এটাও হতে পারে। আল্লাহ এই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সবার জন্য। জানেন এর মানে কি? উনি সবাইকে এক সমান বানিয়েছেন। কুরআনের মাধ্যমে, সালাত নামক প্রতিষ্ঠান টার মাধ্যমে। আমরা তো রেসিস্ট হতে পারি না, কারন আমাদের আছে সালাহ। আমাদের মাঝে স্বাভিমান থাকার কথা নয়, আমরা এটা বলতে পারিনা, আমার জাতি তোমারটার থেকে ভাল, আমার জাতীয়তা তোমারটার থেকে ভাল, আমার ভাষা তোমারটার থেকে ভাল, আমার গাঁয়ের রং তোমারটার থেকে ভাল, আমার গ্রাম তোমারটার থেকে ভাল, এরকম আমরা করতে পারি না, আর জানেন কখন এই জিনিসটা আমাদের আর বেশি মনে পড়ার কথা, যখন আমরা নামাজে দাঁড়াই। যখন বিলাল(রাঃ), উসমান (রাঃ) এর পাশে দাঁড়ান সেটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা সমান। এটাই হুদাল্লিলন্নাস। এটার অর্থ এটাই। জানেন কেন আমি এগুলো বলছি? কারণ আমি মুসলিমদের মাঝে এই প্রবণতা দেখেছি।
আমি মুসলিমদের মাঝে জাতীয়তাবাদ দেখেছি। আমি দেখেছি মুসলিমরা অন্য দেশীয়দেরকে নিয়ে তামাসা করে, অন্যদেরকে ছোট করে দেখে, তাদের সম্পর্কে বাজে কথা বলে, অন্যদের ভাষা নিয়ে বাজে কথা বলে, আরবরা নন আরবদেরকে নিয়ে তামাসা করে, বাংলাদেশীরা পাকিস্তানীদেরকে নিয়ে তামাসা করে, পাকিস্তানীরা ইন্ডিয়ানদেরকে নিয়ে তামাসা করে, ফিলিপিনোরা মালয়েশিয়ানদেরকে নিয়ে তামাসা করে, কি হচ্ছে আমাদের, আমারা কি নামাজ পড়ি না? পড়ি না নামাজ? আমরা সালাত থেকে শিখছি না কিছু, আমরা কুরআন থেকে শিখছি না কিছু, আমি বলেছি আপনাদেরকে আগেও আমাদের শুধু খোসাটাই আছে, ওই অনেকটা ভিতরে ডিম নেই শুধু খোসা আছে এরকম অবস্থা। আমাদের ইসলাম অনেক সময় এরকম, আপনাকে দেখতে মুসলিম মনে হয়, মুসলিমরা যেমন কথা বলে আপনি সেরকম কথা বলেন, কিন্তু আপনার হৃদয়ের ভিতরে আপনার দীনের জন্য কোন ভালবাসা নেই। এখানে যারা বসে আছেন সবাই, এই মুহূর্তে এখানে অনেক ভিন্ন সংস্কৃতির অনেকে বসে আছেন, এটিকে একটা আন্তর্জাতিক সমাবেশ বলা যেতে পারে। এই মুহুর্তে এটাকে জাতিসংঘ বলা যেতে পারে। একটা কথা বলি, আমি আপনার নাম জানি না, কেউ কেউ হয়তো আমার নাম জানে কিন্তু আমি কারো নামো জানি না, কিন্তু জানি আমাদের মাঝে এমন একটা সম্পর্ক আছে যা রক্তের চেয়েও গাঢ়, শুধু মাত্র আমরা সবাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলি এই কারনে এটি রক্তের থেকেও গাঢ়। শুধুমাত্র এই কারনে, এই কুরআন আমাদেরকে একসুতায় গাঁথে। এবং এই কথাটা ইহুদিদেরকেও বলা হয়েছিল, কেন জানেন, কারণ ওরা বিশ্বাস করতো তারা বিশেষ। বাকী সবাই সেকেন্ড ক্লাস, তারা প্রথম সারির। বাকী সবাই সাধারণ আর তারা হচ্ছে আল্লাহ নির্বাচিত বিশেষ জাতি। আল্লাহ বলছেন যে কেউ কুরআনের একজন অনুসারী হতে পারে। হুদাল্লিলন্নাস। সমগ্র মানবজাতির জন্য খোলা দাওয়াত। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে সবধরনের বর্ণ বৈষম্য, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ। এসব সব কিছু দূর করে দেয়। সুবহানাল্লাহ কি চমৎকার একটি দ্বীন। কি চমৎকার ব্যাপার! এমনকি আমেরিকাতেও, আমি বলতে পারবো যে একই এলাকার মাঝে কালোদের জন্য আলাদা গীর্জা আছে, স্প্যানিশরা আলাদা গীর্জায়, গ্রীকরা আলাদা এরকম আছে, এমনকি ব্রুকলীনের মত জায়গাতেও বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন গীর্জা আছে, আর আপনি একটা মসজিদে ঢুকেন দেখবেন, দেখে মনে হবে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলছে। বিভিন্ন জাতির মানুষ সব এক সারিতে দাঁড়ানো। এমনকি তারা কেউ কারো ভাষাও জানে না, কিন্তু তারা এক সাথে নামাজ পড়ছে। কুরআনও আমাদেরকে একীভূত করে, যখন আমরা সালাতে দাড়াই। আমরা কি শুনি? কুরআন। হুদালিলন্নাস। ওয়াবায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান। মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক। সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق