آخر الأخبار
আমার কোন চাকরি করা উচিত ?
নু'মান আলী খান।
নু'মান আলী খান।
বর্তমান সময়ে তরুণেরা, বিশেষভাবে তরুণেরা, তারা বলে যে, আমি জানিনা আমার কি করা উচিৎ। উস্তাদ, আমাকে বলুন আমার কি করা উচিৎ। আমি কোন বিষয়ে পড়ব? কোন চাকরি করব? কিন্তু তারা আসলে কিছুই করেনা। তারা একজনের কাছ থেকে ৩০টা উপদেশ নেয়, তারপর আরেকজনের কাছ থেকে ৪০ টা নেয়। তারপর আরেকজনের কাছ থেকে ৫০টা। এরপর যখন বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অনেক উপদেশ জমা হয়, তখন তারা বলে, আমি তো ১০০ জনের কাছ থেকে ১০০ রকম উপদেশ পেয়েছি। অবশ্যই, কারণ আপনি ১০০ জনের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন। আর ১০০ রকম উত্তর পেয়েছেন কারণ প্রত্যেক মানুষের মতামত ভিন্ন। তাই তারা ভিন্ন ভিন্ন উপদেশ দিবে। যতক্ষণ না আপনি নিজেকে কাজে নিয়োজিত করবেন, ততক্ষন আপনি জানতে পারবেন না, আপনি আসলে কি? আপনি আপনার শক্তি এবং দুর্বলতা কোনটাই ধরতে পারবেন না। কোন কাজ করার আগে ভয় পাওয়া বন্ধ করুন, উদ্যোগ নিতে ভয় পাবেন না, চেষ্টা করতে বা ব্যর্থ হওয়ার ভয় পাবেন না। ব্যর্থতা আসলে আপনার জন্যে ভাল। এটা কোথায় ফাটল আছে টা দেখিয়ে দেয়। আপনাকে কোথায় উন্নতি করতে হবে তা দেখিয়ে দেয়। আবার আপনি কিসে ভাল সেইটাও দেখিয়ে দেয়, হয়ত আপনাকে এতে আরও ভাল হতে হবে, কিন্তু এসব কখনই হবেনা যদি আপনি চেষ্টাই না করেন। যতক্ষণ না আপনি নিজেকে কাজের মাঝে নিযুক্ত করবেন। আমি চাই আপনারা এভাবে চিন্তা করুন, আমাদের রুহ তো আলামুল আমর থেকে, কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে এই যে জীবন দিয়েছেন যা আমরা কাজে লাগাতে পারি তাতো অসীম নয় তাইনা? তাই পূর্ণ বয়স্ক হওয়া, ঘুম আর বৃদ্ধ হওয়া, যখন আপনি অকর্মণ্য হয়ে যাবেন, এর মধ্যে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। নিজেকে আবিষ্কার করার, নিজেকে কাজে নিবেদিত করার। তাই নতুন কিছু করতে ভয় পাবেন না। আল্লাহ আমাদের কে এই জীবনে এত সুন্দর এক অভিযানের সুযোগ দিয়েছেন, তাই চেষ্টা করতে ভয় পাবেন না। আর আপনারা যে আরবি শিক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এইটা অবশ্যই ভাল, কিন্তু এটা মাত্র ভ্রমনের শুরু। ব্যবসাগত, শিক্ষাগত সহ বিভিন্ন পেশা পরখ করুন। আর আপনি যদি ভয়ে জীবন কাটিয়ে দেন এই ভেবে যে যদি এইটা আমার জন্য না হয়, আমি যদি এতে সাফল্য না পাই, তাহলে আপনি সারাজীবন এক পাশেই পড়ে থাকবেন, জীবনে কিছুই করতে পারবেন না। ব্যর্থতার ভয় থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে, নিজের শাকিলার উপর জোর দিতে হবে। আপনাকে প্রাথমিক ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে, আর যখন তা পারবেন দেখবেন জীবনে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। যখন আপনি ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
আপানদের আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রের কথা বলি, আপনারা হলেন ৫ম ব্যাচের ছাত্র, ভাবলেই অবাক লাগে। যাই হোক, আমার প্রিয় ছাত্র, নাম বলবনা, তার সমস্যা কি ছিল? আমি বলি, আল্লাহ তাকে আরবি শিক্ষার জন্য সৃষ্টি করেন নি। আমি এটাই বলি। কিন্তু সে আমার খুব প্রিয় ছাত্র। আমি তাকে খুবই ভালবাসি। এবং সে আমি যতজনকে চিনি তাদের সবার থেকে বেশি পরিশ্রম করেছে, রাত আর দিন, ব্রেকের সময় বাকিরা হয়ত অন্যকিছু করছে, সে পড়াশুনা করছে, মানুষজন দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছে কিন্তু সে পড়ছে, সে নোট এর মধ্যে ডুবে আছে, প্রশ্ন করছে, আর পড়ছে তো পড়ছেই। সে একের পর এক খাতা শেষ করে ফেলছে নোট লিখে লিখে। তার হাত ব্যথা হয়ে যেত, তবুও সে ল্যাপটপ ব্যবহার করতো না, কারণ সে ভাবত তা হল অলসদের জন্য। আর সে আমার কাছের একজন বন্ধুও, আমরা এর আগে একসাথে সময় কাটাতাম। আগে যখন আমি বলতাম চল কিছু একটা করি, সে রাজি হয়ে যেত, কিন্তু এখন আমি যখন তাকে ফোন করে বলি চল বাইরে যাই, সে বলে না, আমার কাজ আছে। অথচ দিনের বেলায় আমি তার শিক্ষক। আর রাতে যখন আমি তাকে ফোন দেই, সে বলে যে তাকে পড়তে হবে। ধন্যবাদ, ক্লিক। কিন্তু সে অনেক পরীক্ষায় ভয়াবহ ভাবে ফেল করেছে। কিন্তু তার জন্য আমার খারাপ লাগেনা। কারণ সে সত্যিকার অর্থে চেষ্টা করেছে। আর এমন লোকও ছিল যারা খুব একটা চেষ্টা না করেই ১০০ পেয়েছে। প্রথমত আমি মনে করি তাদের জন্য এই সময়ের কোন মূল্য নেই, তারা যা শিখেছে, আর আমি তাদের কাজকে শ্রদ্ধাও জানাইনা। কিন্তু সে যা করেছে আমি তা শ্রদ্ধা করি। আমি কিছু একটা করব, যথা সম্ভব চেষ্টার সাথে করব। ব্যর্থতার প্রথম আগমনেই ভয় পেয়ে পালাবোনা। আমি অন্য কিছু করা শুরু করব না। আর এটাই আমাদের বুঝতে হবে, ক্যারিয়েরের ক্ষেত্রেও, আপনি যে প্রচেষ্টা করবেন, যতক্ষণ আপনি উপভোগ করছেন, আর যেই একটু ছন্দপতন ঘটল, আপনি ভাবলেন এখন আমার অন্য কিছু করা উচিৎ, তাই কি? এটা তো জান্নাত নয়, ভাল দিনের সাথে সাথে খারাপ দিনতো থাকবেই। এই জীবনটাই এমন।
যখন অনুগ্রহ আসতে থাকল, সব ঠিক আছে, আমি খুশি, আর যখনি কিছু মনমত হলনা, তারা চরম হতাশ হয়ে গেল। আমার এটা করা ঠিক না বা এটা আমার জন্য না। এটা ছাত্রদের সাথেও হয়, তারা একটা পরীক্ষায় ফেল করে, আরে না, ফেল না, ৯৫ পেল। আস্তাগফিরুল্লাহ। আপনি কিভাবে বাব মাকে মুখ দেখাবেন, আপনাকে কে বিয়ে করবে, কারণ আপনি ৯৫ পেয়েছেন। আমার মনে হয় আমার পড়াশোনা ছেড়ে দেয়া উচিৎ, কারণ এখন আর কোন লাভ নেই। সত্যি? সিরিয়াস হউন, মেরুদণ্ড শক্ত করুন। আপনি যাই করেন না কেন, নিজেকে পুরোপুরি নিবেদিত করুন। আর এটা শুধু এই প্রোগ্রামে না জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যাই করুন পুরোপুরি মনোযোগের সাথে করুন। অবশ্যই সাহায্য চাইতে পারেন, কিন্তু অতিরিক্ত চাইবেন না। এমন যেন না হয় যে আপনি উপদেশের পর উপদেশ নিচ্ছেন কিন্তু নিজে কিছুই করছেন না। আপনার জীবনে আপনি খুব অল্প কিছু মানুষকে বিশ্বাস করতে পারেন। আবার এমন লোকও আছে যারা এমন মানুষের কাছে উপদেশ চায় যে তারা যানে তারা দুই রকম উত্তর পাবে। কারণ তারা দ্বিধার মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। তারা একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। সে এইটা বলেছে কিন্তু তুমি এইটা বলছ। তারপর আপনি যখন কিছু বললেন তখন তারা বলবে কিন্তু অমুক ঐটা বলেছে। এইটা তো আগেই বলা যেত। উপদেশ নিবেন, কিন্তু তার যেন উদ্দেশ্য থাকে। আর যাকে বিশ্বাস করেন তার কাছে চান, যেনতেন লোকের কাছে না। আর আপনি যদি তা না করেন, তাহলে কি বুঝায় জানেন? প্রথমত আপনার নিজের উপর বিশ্বাস নেই, দ্বিতীয়ত আপনি মানুষকে বিশ্বাস করেন না। আপনি কেন তাদের জিজ্ঞেস করছেন, যেখানে আপনি নিজেই জানেন আপনার সিদ্ধান্ত? আপনার সবার উপদেশ নিতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমার বা শেখ উমর সুলাইমানের বা শেখ আব্দুল নাসেরের উপদেশ বা যে কারও উপদেশ। আপনি উপদেশ নিয়ে নিজের বুদ্ধি খাটান। আর যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন আর সামনে এগিয়ে যান। আর এভাবেই আপনি নিজেকে চিনতে পারবেন। আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা যা মুসলিমদের আত্মস্থ করা উচিৎ। তাহলে আপনার এবং আপনার সাথে জড়িত অন্যদের জীবনেও আশাতীত পরিবর্তন আসবে।

ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق