الخميس، 13 فبراير 2020

আল্লাহ সর্বশক্তিমান - (১ম পর্ব)

আল্লাহ সর্বশক্তিমান - (১ম পর্ব)
- উস্তাদ নোমান আলী খান
ইনশাআল্লাহ, আজ আমি আপনাদের নিকট আল্লাহর একটি নাম القوي - এর উপকারিতা বর্ণনা করবো। القوي অর্থ - শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী। এই অসাধারণ শব্দটি দ্বারা আল্লাহর একটি নাম প্রকাশ করা হয়। শব্দটি শুনলেই আপনি বুঝতে পারেন এর মানে হল আল্লাহ সর্বশক্তিমান। কিন্তু সুরাতুল হাজ্জের শেষের দিকে আল্লাহ যেভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা অসাধারণ চমকপ্রদ। আমি যুক্তি দেখাবো, একজন বিশ্বাসীর জন্য আল্লাহর 'القوي' হওয়ার মানে কী তা উপলব্ধি করার জন্য আল কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি হল সুরাতুল হাজ্জের এই অংশটি। আমরা তাঁর সকল নামে বিশ্বাস করি কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি নাম কোন না কোনভাবে আমাদের উপকার করে। কোন না কোনভাবে আমাদের সাহায্য করে। القوي কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? এটা শেখার অন্যতম একটি সেরা জায়গা হল ২২তম সূরা, সুরাতুল হাজ্জের শেষের অংশ।
এই সূরায় আল্লাহ একটি উপমা পেশ করেন যেন মানুষ তাঁর সম্পর্কে একটি ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে। তিনি বলেন - يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ - "হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;" এভাবেই তিনি শুরু করেছেন, একটি উপমা দেয়া হল মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো। তিনি সাধারণত এভাবে বলেন - আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করলেন। কিন্তু এখানে বলেছেন, একটি উপমা প্রদান করা হলো। 'আমি একটি উপমা দিচ্ছি' বলার পরিবর্তে। তিনি এখানে বক্তাকে আলোচনা থেকে গোপন করে ফেললেন। এটি একটি সাইড নোট - কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি - যা আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন।
আমি এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার একটি নির্দিষ্ট রূপ আছে, আমার দাঁড়ি আছে, আমার পোশাক এইরকম, আমার মাথায় টুপি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনারা সরাসরি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। আমি কুরআন থেকে কিছু তিলাওয়াত করলে বা কোন আলোচনা করলে সেটাও আপনারা দেখতে পান।
কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতির কথা মনে মনে কল্পনা করুন। আপনারা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। এমন সময় ষোল বছরের এক কিশোর বক্তৃতার মঞ্চে উঠে আসল। তার বাহুতে ট্যাটু আঁকা, পরনে জিন্স, গায়ে টি শার্ট, মাথায় পেছন দিকে ফেরানো বেইস বল হ্যাট। সে মাইকের কাছে এসে কথা শুরু করার আগেই কিছু লোক পালানোর জন্য দরজা খুঁজতে লাগলো। কিছু মানুষ ভাবতে লাগলো - নামাজ মনে হয় আবার পড়তে হবে। কেউ কেউ ভাবতে লাগলো, তাকে মঞ্চ থেকে সরানো হচ্ছে না কেন। এর মধ্যে সে বক্তৃতা দেয়া শুরু করলো। আর সে আপনার জীবনে শোনা সেরা বক্তৃতা দিল। সে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি দিল। এবং এমন অসাধারণ আলোচনা করলো যে জীবনে কখনো এমন শক্তিশালী কথা শুনেননি। আপনারা যারা তাকে দেখতে পাচ্ছেন তাদের পক্ষে তার কথা থেকে উপকার পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ তার চেহারা-সুরত দেখে ভাবতে লাগলেন - তার ওয়াজ করার কোন দরকার আছে??
কিন্তু যারা মসজিদের বাহিরে বসে আছে তারা তো আর তাকে দেখতে পাচ্ছে না। বাহিরের মানুষ শুধু তার কথা শুনছে। তো, ভেতরের মানুষরা বলতে লাগলেন - আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ...আর যারা বাহিরে তারা কী বলছেন? মাসাআল্লাহ, মাসাআল্লাহ… হা, হা, হা।
এই উদাহরণটি পেশ করার কারণ হচ্ছে - মানুষ কারো কথা শোনার আগে তার চেহারা-সুরতের দিকে লক্ষ্য করে। আমরা কারো বক্তব্যের চেয়েও তার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা-সুরতের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি। তাই কারো পোশাকের দিকে তাকিয়ে বলি - "সে যাই বলুক না কেন তার কথা শোনার কোন মানে হয় না।" আবার আরেকজনের ক্ষেত্রে হয়তো বলি - "তার কথা বেশি মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা উচিত।" শুধু তাদের চেহারা-সুরতের ভিন্নতার কারণে।
কখনো কখনো হয়তো তাদের গায়ের রং এর কারণে। তাদের পোশাক আশাক বা বয়সের কারণেও হতে পারে। কোন ব্যক্তি তার মুখ খোলার আগেই তার পোশাক-আশাক অথবা চেহারা সুরত এর দিকে তাকিয়ে আমরা মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি - লোকটার কথা শুনবো নাকি শুনবো না?
এই আয়াতে আল্লাহ বক্তার উপর থেকে ফোকাস সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন - "একটি উপমা প্রদান করা হল...। " আল্লাহ এই উপমাটি দিচ্ছেন অথবা রাসূলুল্লাহ (স) দিচ্ছেন - এই ব্যাপারটা আপাতত এক দিকে সরিয়ে রাখ। উপমাটি কে দিচ্ছে তার দিকে মনোযোগ না দিয়ে উপমাটির দিকে মনোযোগ দাও।
কারণ, এই পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ রয়েছে তারা যখনই শুনে "আল্লাহ বলেছেন ..." তখনি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলে উঠে "আবার ধর্ম নিয়ে লেকচার দিতে আসছে!!" চল, আমরা বরং অন্য কিছু দেখি। যখনই শুনে "রাসুলূল্লাহ (স) বলেছেন..." তখনি বিরক্তির স্বরে বলে উঠে "আবারো ধর্মীয় ব্যাপার! আমরা কি অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে পারি না?" তাহলে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু মানুষ যখনই শুনে "আল্লাহ বলেছেন বা রাসুল (স) বলেছেন..." তখনি তারা কথাটা শোনার সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা শুনতে চায় না।
তাই আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই অসাধারণ উপমা প্রদান করার সময় কী করলেন? এই উপমাটি সমস্ত মানব জাতির জন্য। "ইয়া আইয়ুহান নাস..." এখন মানব জাতির সবাই তো আল্লাহর কথা শুনতে আগ্রহী নয়। তাই আল্লাহ বলছেন যদিও তোমরা তাঁর কথা শুনতে আগ্রহী নও, উপমাটি অন্তত মনোযোগ দিয়ে শোন। "দুরিবা মাসাল, ফাসতামিউ লাহু ..." উপমাটিকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখো।
এখন তিনি নিজের সম্পর্কে একটি বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন - إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا - “তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। ” وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ - “এ উদ্দেশে তারা সবাই একত্রিত হলেও।” এই কথা শোনার পর আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, তারা মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না - মানে কী? এই কথা বলার উদ্দেশ্য কী?
আর মাছি তো আর চিত্তাকর্ষক কোন প্রজাতি নয়। বরং মাছি হল মানুষের অভিজ্ঞতায় অন্যতম বিরক্তিকর একটি জীব। তাদের দেখলেই আপনি তাড়িয়ে দিতে চান। সাধারণত নোংরা এবং দুর্গন্ধময় জায়গায় তাদের দেখা যায়। আর ভালো খাবারের উপর যদি মাছি বসে আমরা মনে করি তারা খাবার নষ্ট করে ফেলছে। তাই আমরা এদের তাড়িয়ে দেই।
আল্লাহ বলছেন - "তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না।" এর সাথে আরেকটি ব্যাপার যোগ করলেন - ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ - “আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা তার থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না। ”
প্রথমত, তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। তারপর, এই মাছিটি...মনে করুন, আপনি কোন খাবার খাচ্ছেন এমন সময় একটি মাছি এসে আপনার খাবারের উপর এক সেকেন্ডের জন্য বসল। তারপর পা দিয়ে অল্প একটু খাবার নিয়ে নিলো। আপনি তখন হাত নেড়ে মাছিটিকে তাড়িয়ে দিলেন। এখন আল্লাহ বলছেন, যদি কোন মাছি এসে তাদের খাদ্যের উপর বসে এবং তাদের কাছ থেকে খাদ্যের কিছু অংশ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, গোটা মানব জাতি একত্রিত হলেও তার থেকে তা উদ্ধার করতে পারে না। এ কথাই তিনি বলেছেন। لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ - তারা এটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।
এখন মানুষের ক্ষেত্রে - কিছু মানুষ শক্তিশালী আর কিছু মানুষ দুর্বল। কিছু মানুষ গরিব আর কিছু মানুষ ধনী। অনেক মানুষের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। তাদের হয়তো থাকার একটি ঘরও নেই। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে। যারা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিহাসে এবং আজকের দিনেও।
এখন ফেরাউনের মত রাজা যদি নিজ প্রাসাদে বার্গার খেতে বসে, আর এমন সময় একটি মাছি এসে তার খাবারের উপর বসে তাকে অসম্মান করে...। ভাবতে পারেন? রাজা খেতে বসল আর কেউ একজন এসে বলল, এই খাবারটা আমার; আমি এই কেচআপ খাব। এমন করলে লোকটা মারা পড়বে। এখন মাছি এসে যদি তার খাবার খাওয়া শুরু করে ...আর ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে বলে - "কতো বড় সাহস! আমি আমার খাদ্য এর কাছ থেকে ফেরত চাই।" এমনকি যদি তারা মাছিটি ধরেও ফেলে কী করতে পারবে? তারা এই খাদ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।
এই অসাধারণ উপমাটির মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আগেকার দিনে যারা মূর্তি পূজা করতো তাদের নিকট একটি ব্যাপার পরিষ্কারভাবে তুলে ধরলেন। এমন মূর্তিপূজকদের অনেকেই তাদের মূর্তির সামনে খাবার পেশ করতো। তারা দুধ, মধু, চকলেট, আইসক্রিম - আমি জানিনা - যাই আনুক না কেন, মূর্তির সামনে এই খাবারগুলো পেশ করতো। তারপর তারা উপাসনা করতো।
আর এই মন্দিরগুলো সাধারণত উন্মুক্ত থাকে। এখন মূর্তির সামনে যদি এভাবে খাবারগুলো উন্মুক্ত থাকে কে এগুলো খেতে আসবে? মাছি আসবে। একটি মাছি গিয়ে তাদের বিশাল মূর্তির নাকের ডগায় গিয়ে বসে। ''এই যে, তোমার খাবার এখন আমি খাবো। মাইন্ড করবা নাতো?" তারপর এটি খাবারের উপর বসে এক টুকরো খাবার নিয়ে উড়ে চলে যায়। আর তাদের দেবতার কোন ক্ষমতাই নেই এই খাবার প্রতিরক্ষা করার।
এখন তাদের এই পবিত্র? খাবার যাতে তারা বিভিন্ন তন্ত্র মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয়, প্রার্থনা করে ইত্যাদি...এখন আপনি সেখানে গিয়ে যদি বলেন, "আরে! এটা তো আমার সবচেয়ে প্রিয় চকলেট" তারপর একটা নিয়ে নিলেন। তখন তারা কি করবে? আপনার হাত থেকে কেড়ে নিবে। আর খেয়ে ফেললে হয়তো আপনাকে মারতে আসবে। কারণ, তাদের মতে আপনি এটাকে অপবিত্র করে ফেলছেন।
তথাপি, তাদের ধর্ম প্রতি মুহূর্তে অপমানিত হচ্ছে কার দ্বারা? মাছির দ্বারা। আল্লাহ বলছেন এই মাছি তোমাদেরকে শেখাচ্ছে এই দেবতাগুলো শক্তিহীন।
মাছি তোমাদেরকে এটি শিক্ষা দিচ্ছে। তো, আল্লাহ বলছেন আমি তোমাদেরকে ছোট একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক প্রথমত, তারা এমনকি একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। আর মাছি যদি তাদের খাবারের কিছু অংশ কেড়ে নিয়ে যায়, কিভাবে তারা এই খাবার উদ্ধার করবে?
মজার ব্যাপার হলো, আমি এই আয়াতটির কারণে মাছি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। কিভাবে মাছি খাবার খায়? আমি জানতাম না - কোনো মাছি যখন খাবারের উপর বসে, সে তখন মুখ থেকে লালা ছেড়ে দেয়। তারপর এই লালা দিয়ে একটি ব্যাগ তৈরী করে। খাবার এই ব্যাগের ভেতর যায়, তারপর সে এই ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। আর এই ব্যাগ হল এসিডের তৈরী। খাবার ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথে ক্যামিক্যাল রিয়্যাকশন শুরু হয় এবং খাদ্যটি চিরকালের জন্য পরিবর্তিত হয়ে যায়।
তাই, কথার কথা - যদি আপনি আয়াতটিকে ভুল প্রমান করার জন্য কোনো টেকনোলজি আবিষ্কার করেন। কোনোভাবে মাছিটাকে ধরে ফেললেন। তারপর পেট্রি ডিশের উপর রেখে এই খাবার উদ্ধারের দায়িত্ব দিলেন সাইন্টিস্টদের। কোনো লাভ হবে না, কারণ মাছিটি খাবারটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই এটি হারিয়ে গেছে। আপনার পক্ষে আর এটি ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ - তারা এটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।
-------------------------- * --------------------

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق