Nouman Ali Khan Collection In Bangla added a new فيديو.
●||● আপনার সাথে ফেরেশতার করমর্দন ●||●
● বিদায়া ওয়ান নিহায়া - পর্ব ২৪ ●
শায়েখ ওমার সুলেইমান
● বিদায়া ওয়ান নিহায়া - পর্ব ২৪ ●
শায়েখ ওমার সুলেইমান
---
একটি খুবই বিখ্যাত হাদিস আছে, একে বলা হয় হানজালার হাদিস। হানজালা (রাঃ) শুধু এই একটি হাদিসের জন্যই বিখ্যাত। কাহিনিটি হলঃ হানজালা কান্না শুরু করলো নিজেকে মুনাফিক মনে করে, আর এই হাদিসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যদি গভীরভাবে চিন্তা করা হয় যে হানজালার পূর্ব পরিচয় কি। হানজালা (রাঃ) বলছেন, আমরা যখন নবী (সাঃ) এর সাথে ছিলাম, খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করুন তিনি কি বলতে যাচ্ছেন, তিনি বলেন, ব্যাপারটা অনেকটা এমন ছিল যে আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নাম চোখের সামনে দেখতে পেতাম। আমাদের মনে হত আমরা যেন এই পৃথিবীতে নেই। যেন জান্নাত ও জাহান্নাম আমাদের সামনেই আছে। পৃথিবী বলে কিছু নেই। তারপর আমরা বাসায় চলে আসলাম, আর আমি আমার বাচ্চাদের সাথে খেলা শুরু করলাম, পরিবারের সাথে হাসাহাসি শুরু করলাম, এবং হঠাৎ আমার মনে হল আমি মনে হয় একজন মুনাফিক। তিনি আবু বকর (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি একজন মুনাফিক। আবু বকর (রাঃ) বললেন, কেন? কারণ আমরা নবী (সাঃ) এর সামনে যেভাবে থাকি, অন্য সময় সেভাবে থাকিনা। আবু বকর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো আমিও একজন মুনাফিক। তাই তারা দুইজন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে গেলেন, এবং বললেন যে তারা মুনাফিক। সুবহানালাল্লাহ, একবার ব্যাপারটা ভেবে দেখুন। নবী (সাঃ) বললেন, কেন? তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), আমরা যখন আপনার সাথে থাকি তখন একরকম থাকি, কিন্তু যখন বাসায় যাই, আমরা দুনিয়ার অন্য ব্যাপারে মনযোগী হয়ে যাই, এবং আখিরাতের কথা ভুলে যেতে থাকি। এবং নবী (সাঃ) খুবই শক্তিশালী একটি উত্তর দিলেন, বললেন, ইয়া হানজালা, যদি তুমি সবসময় এমনটাই থাকতে যেমন তুমি আমার সামনে থাকও, তাহলে ফেরেস্তারা তোমার সাথে বাস্তবিক অর্থে করমর্দন করত। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তুমি বিছানাতেই থাকও অথবা রাস্তাতেই থাকও, ফেরেশতারা সত্যি সত্যি এসে তোমার সাথে করমর্দন করত।
ফেরেশতারা আমাদের সাথে ক্রমাগত সালাম বিনিময় কোথায় করবেন? জান্নাতে। আপনারা যদি হাদিসের শুরুতে ফিরে যান, হানজালা বলছেন, আমরা যখন নবী (সাঃ) এর সাথে থাকতাম, আমাদের ঈমান এত উচ্চ থাকতো যেন মনে হত আমরা জান্নাত দেখতে পারছি। আর নবী (সাঃ) বলছেন, এই পৃথিবীতে এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। তোমরা সবসময় এমন থাকতে পারবেনা, যেমনটা তোমরা আমার সাথে থাক। যে বিষয়টি এখানে মুখ্য তা হল, হানজালা (রাঃ) এর অর্জন এইখানেই সীমিত নয় যে, ফেরেশতারা তার কাছে আসবে, বরং তিনি আমাদের কাছে এইজন্য পরিচিত যে, তাকে বলা হয়, “গাসিরাল মালাইকা”, যাকে ফেরেশতারা ধৌত করেছেন। কারণ হানজালা (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন, এবং ফেরেশতারা তার দেহ ধৌত করেছিল। মানুষ নয়, ফেরেশতারা তাকে গোসল দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ। যেই ব্যক্তি মনে করেছিলেন, আমরা সবসময় ফেরেশতাদের দ্বারা সালাম পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে পারবো না, আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’লা তাকে এমন ভাবে পুরস্কৃত করেন যে, ফেরেশতারা তার গোসল সম্পন্ন করেন যখন তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের জীবনে এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেন ফেরেশতারা আমাদের ঘিরে থাকেন।
সাহাবিদের থেকে আমরা এমনটা দেখতে পাই যে তারা সর্বদা কোন না কোনভাবে জ্ঞান আহরণের জন্য, বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করতেন। নবী (সাঃ) বিখ্যাত একটি হাদিসে বলেছেন, যে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করে ফেরেশতারা তার জন্য পাখা প্রসারিত করে দেয়। তারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও তার জন্য দোয়া করে। নবী (সাঃ) বলেন, কেউ যদি আল্লাহর জিকির এর সাথে যাত্রা শুরু করে, যেমন ধরুন, সকালে কাজে যাবার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন, হাবিজাবি না শুনে, পথে কুরআন তিলাওয়াত শুনলেন, নবী (সাঃ) বলেন যে, তাহলে একজন ফেরেশতা তার সহযাত্রী হয়ে যায়। ভেবে দেখুন একজন ফেরেশতা আপনার সাথে কাজের পথে যাচ্ছে।
আমরা উসাইদ ইবন হুদাইর (রাঃ) এর একটি হাদিস থেকে পাই যে, তিনি বলেন, আমি আমার ছেলের সাথে ছিলাম, আর সে সূরা বাকারা পড়ছিল। আর এ সময় তার ঘোড়া উত্তেজিত হয়ে উঠল এবং তিনি আকাশ থেকে আলোকরশ্মি নেমে আসতে দেখলেন। সুবহানাল্লাহ, আর তিনি যখন তিলাওয়াত বন্ধ করলেন, ঘোড়া শান্ত হয়ে গেল। এবং তিনি আবার পড়া শুরু করলেন এবং আবার একই ঘটনা ঘটল, তার ঘোড়া অস্থির হয়ে উঠল। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, আমি যদি ভয় না পেতাম যে আমার ছেলে ঘোড়া থেকে পড়ে ব্যাথা পাবে, আমি পড়তেই থাকতাম। তিনি তার ছেলের কথা চিন্তা করে থেমে গেলেন। তিনি যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ ঘটনা বললেন, তিনি বললেন, এরা ছিল ফেরেশতা। তারা তোমার তিলাওয়াত শুনছিল। যদি তুমি আরও পড়তে থাকতে তাহলে অন্যরাও তাদের দেখতে পেত। সুবহানাল্লাহ, তারা সবাই চোখের সামনে দেখা দিত। শুধু তিলাওাতের কারণে। অবশ্যই এটা সবার ক্ষেত্রে ঘটবেনা, কারণ উসাইদ ছিলেন একজন বিশেষ সাহাবা। কিন্তু সাধারণ অর্থেই, আপনি যখন কুরআন পাঠ করছেন, ফেরেশতারা তখন আপনাকে ঘিরে ধরে।
এছাড়া, নবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি ঘুমানোর আগে অজু করে তাহলে আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’লা একজন ফেরেশতা পাঠান, এবং যখনি আপনি ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করেন, সেই ফেরেশতা আপনার জন্য দুয়া করেন, “আল্লাহ তুমি একে মাফ কর, এর উপর দয়া কর। কারণ সে আজকে পবিত্র হয়ে ঘুমোতে গেছে।”একবার ভাবুন, সারা রাত ধরে একজন ফেরেশতা আপনার জন্য দুয়া করবে। শুধু মাত্র এই কারনেই যে আপনি পবিত্র অবস্থায় ঘুমোতে গিয়েছেন। আর পবিত্র থাকার চেয়ে আরও ভাল কি হতে পারে? সালাহ। তাই না? আপনি যখন সালাহ আদায় করেন, ফেরেশতারা আপনাকে ঘিরে থাকে। নবী (সাঃ) বলেন, যখন কেউ মসজিদে যেয়ে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য দুয়া করতে থাকে, মাফ চায়তে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাহ শেষ না করছে, অথবা অজু ভেঙ্গে না ফেলছে। মানে আপনি শুধু নামাজের জন্য অপেক্ষা করছেন, এখনও শুরুই করেননি, কিন্তু তাতেই ফেরেশতারা আপনার জন্য দুয়া শুরু করে দিয়েছেন। যতক্ষণ না সালাতে আপনি নিজের জন্য দোয়া করা শুরু করছেন। উনারা তাদের কাছেই আসেন যারা ভাল কাজ করছেন, এবং তাদের সাথে অবস্থান করেন। আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, আমরা যখন ভাল কোন কাজ করি তখন তারা আমাদের সাথে আছেন, এবং আমাদের জন্য দোয়া করছেন, সারাদিন ধরে। সুবহানাল্লাহ, আর এটা প্রতিদিনই ঘটছে।
আমার মনে আছে, আমি একটি দান সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ছিলাম, আর ইমাম সিরাজ উল্লেখ করেছিলেন, একটি বিখ্যাত হাদিস, নবী (সাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন দুইজন ফেরেশতা আসেন, এদের একজন বলেন, আল্লাহ তাকে দান কর যে অন্যকে দান করে, আরেকজন বলেন, আল্লাহ তাকে ধ্বংস কর যে করেনা। তারা দুয়া করছেন তার জন্য যে দান করে, আর ধ্বংস কামনা করছেন তার জন্য যে, সম্পদ আঁকড়ে ধরে থাকে। আর ইমাম সিরাজ বলেন যে, ফেরেশতারা যখন আজকে রাতে আমার নাম লিখবে, তখন আমার নামের পাশে একটি সংখ্যা লিখা হবে। আর আমি এইটাই নিশ্চিত করতে চাই যেন সেই সংখ্যাটি শুন্য না হয়। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, যেন সংখ্যাটি শুন্য না হয় এবং তারা আপনার জন্য দোয়া করেন।
পরিশেষে আপনি সালাতের মধ্যেও এটা নিশ্চিত করে পারেন যে, আপনি আর ফেরেশতারা একই সাথে দোয়া করছেন এবং এটা হবে মাফ পাওয়ার খুবই বড় একটি সুযোগ। চিন্তা করুন, তারাতো সালাতের আগে আপনার জন্য দোয়া করছিলোই, আর নবী (সাঃ) বলেন, যখন ইমাম আমিন বলেন, তখন ফেরেশতারাও আমিন বলেন। আর যদি আপনার আমিন আর ইমাম এর আমিন একই সাথে হয়, তাহলে আপনার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তাই ইমাম এর আগেই আমিন বলে বসবেন না বা লম্বা করে বলবেন না। ইমাম এর সাথেই বলুন। কারণ ফেরেশতারাও ইমাম এর সাথেই বলেন। আর আমি আশা করি যে আমাদের আমিন আর তাদের আমিন যেন একই সময়ে হয়, এবং আমাদের গুনাহ যেন মাফ হয়ে যায়।
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق