-12:59
1162 مشاهدة
أضاف Muslim Speakers In Bangla السلام عليكم جديد.
আসমাউল হুসনা সিরিজ - ০১
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানার গুরুত্ব।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানার গুরুত্ব।
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আল মালিক , আল কুদ্দুস , আর রাহমান , আর রহিম । সেই মহিমান্বিত সত্ত্বার আরও প্রশংসা করছি আমাদের প্রতি তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বই আল কুরআন নাজিল করার জন্য। আরও প্রশংসা করছি আমাদের প্রতি সকল নবীর শ্রেষ্ঠ নবী প্রেরণ করার জন্য। যিনি প্রেরিত হয়েছেন জগতের জন্য রহমত স্বরূপ।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
প্রতি বছর রামাদানে আলোচনার জন্য আমরা একটা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করি। ইনশাআল্লাহ , এই বছর যে বিষয়বস্তুটি ঠিক করা হয়েছে তা এমন একটি মহত এবং গুরুত্ব পূর্ণ টপিক যা জানা এবং মুখস্ত করার জন্য প্রতিটি মুসলমানের সময় ব্যয় করা উচিত। আর সেই বিষয়টি হলো আল্লাহর কিছু সুন্দর নাম ও গুণ নিয়ে আলোচনা। আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহের আলোচনা কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ জানাই কুরআনের এমন তিনটি চারটি বা পাঁচটি আয়াত পড়ুন যেখানে আল্লাহর কোনো নাম বা গুণের উল্লেখ নেই । কারী সাহেব যখন নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করেন, আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনেন তাহলে দেখবেন কুরআনের প্রায় প্রতিটি আয়াতেই আল্লাহর কোন না কোন নাম বা গুণের উল্লেখ আছে। আর এ কারণেই প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর নামসমুহ ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জন করা আমাদের দ্বীনের একটি মৌলিক বিষয়। আর প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ কে ? এটা জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কি? ঈমানের প্রথম স্তম্ভ হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। তাহলে আল্লাহ কে? আল্লাহকে জানার একমাত্র উৎস হলো তাঁর নাম এবং গুণাবলীসমূহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানার আমাদের আর কোন উৎস নেই। এজন্য আমাদের আলেমরা বলে গেছেন, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হলো তৌহিদের অর্ধেক। আর তৌহিদের বাকি অর্ধেক হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। তাহলে তৌহিদ বলতে বুঝায় আল্লাহকে জানা এবং তাঁর ইবাদাত করা। তৌহিদ বলতে ঠিক এটাই বুঝায়। আমরা কালেমায় পড়ি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' - আপনাকে জানতে হবে আল্লাহ কে? তারপর তাঁর ইবাদাত করতে হবে। ইনশা আল্লাহু তায়ালা, তাই এই লেকচার সিরিজে প্রতিদিন আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি বা দুটি নাম নিয়ে আলোচনা করব।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন যে, আল্লাহর নাম সমূহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হলো সবচেয়ে মহত জ্ঞান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার চেয়ে পবিত্রতর এবং অধিকতর বরকতময় কিছু থাকতে পারে না। এর কারণ প্রত্যেক প্রকারের জ্ঞানের মর্যাদা নির্ধারিত হয় তাঁর বিষয়ের অনুপাতে। যেমন ডাক্তারি পেশাকে গাড়ির ইঙ্গিনিয়ারিং এর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও সমাজের গাড়ির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সমাজ কোন পেশাকে বেশি মর্যাদা দেয়? তাকে যে মানুষের শরীর নিয়ে অধ্যয়ন করে। কারণ, মানুষের যে কোন সৃষ্টির তুলনায় মানুষের শরীরের মর্যাদা বেশি। তাই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম এবং গুণাবলী নিয়ে অধ্যয়ন করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কি? যেহেতু আল্লাহ হলেন সবচেয়ে মহান, মহামহিম, তাবারাকা ওয়া তায়ালা - তাই এমন কোন জ্ঞানের অস্তিত্ব নেই যা আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর জ্ঞানের চেয়ে অধিকতর পুত-পবিত্র। আর এ কারণেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য। কুরআনে একটি আদেশ রয়েছে --- ই'লাম বা ই'লামু, এর অর্থ হলো শিক্ষা অর্জন কর এবং জানো। এটা কুরআনে প্রায় এক ডজন বা দুই ডজন বার বলা হয়েছে।
আর আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, এটা বলার পর অধিকাংশ সময় আল্লাহর একটি নাম বা গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন -- জানো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অতি দয়ালু। জানো যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা। জেনে রাখ যে , আল্লাহ ...... জেনে রাখ যে, আল্লাহ ...। তাই আমরা দেখতে পাই, কুরআনে জ্ঞানার্জন করার নির্দেশের পর পরই আল্লাহর কোন না কোন নাম এবং গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ চান যেন আমরা তাঁর সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করি। কিভাবে আমরা আল্লাহর ইবাদাত করার আশা পোষণ করতে পারি, যদি আমরা না জানি যে আল্লাহ কে?
কিভাবে আমরা আল্লাহকে ভালবাসবো যদি আমরা না জানি যে আল্লাহ কে? কিভাবে আমরা আল্লাহকে ভয় করবো যদি না জানি যে আল্লাহ কে? কিভাবে আমরা বিশ্বাস করবো, ভরসা করবো, যদি আল্লাহকে না জেনে থাকি। এ জন্য, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা আমাদের ঈমান এবং তাওহীদের কেন্দ্রীয় বিষয়। আমাদের আলেমরা বলে গেছেন আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলে আমাদের ঈমান যেভাবে বৃদ্ধি পায়, অন্য কোন উপায়ে তা এতো বৃদ্ধি পায় না। বিভিন্ন উপায়ে ঈমান বৃদ্ধি পায় যেমন- কোন ভালো কাজ করলে, কুরআন অধ্যয়ন করলে, দান- সাদকা করলে, কোন এতিমের দায়িত্ব নিলে… ইত্যাদি। এ সব কিছুই আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করে। কিন্তু সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দ্রুতগতির এবং সর্বাধিক ঈমান বৃদ্ধিকারী কাজ কী? আমাদের আলেমরা বলেন, সর্বাধিক ঈমান বৃদ্ধি কারী আমল হলো আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন অর্থাৎ রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন। এই দু'ধরনের জ্ঞান যেভাবে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করে অন্য কিছুতে সেভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই আবারও বলছি, আল্লাহ এবং তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা আমাদের বিশ্বাস এবং ইবাদাতের কেন্দ্রীয় উপাদান।
আর প্রিয় ভাই এবং বোনেরা আপনারা যদি এই বিষয়ে চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহর প্রতিটি নাম আমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে এমন জ্ঞান দিবে যা পূর্বে আমাদের জানা ছিল না। যখন আমরা এই নামগুলোর অর্থ জানবো যেমন আল মালিক, আল কুদ্দুস, আস সালাম, আল মুমিন, আল মুহাইমিন, আল আজিজ, আল জাব্বার, আল মুতাকাব্বির, আর রাউফ, আর রাহিম এবং আরও অনেক - এই প্রত্যেকটি নাম নিয়ে আসবে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন বিশ্বাস, নতুন ভালবাসা, নতুন আশা। এই নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার সাথে সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। যেমন আমি পূর্বেও বলেছি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা এই বিষয়টা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন, আমাদের রাসুল স উল্লেখ করেছেন যে, এমন কোন সত্ত্বার অস্তিত্ব নেই যিনি আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রশংসিত হতে ভালবাসেন। এ জন্য তিনি নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। আমাদের কেউ যখন আমাদের কারো প্রশংসা করে সে প্রশংসা পুরোপুরিসত্য হয় না। কারণ আমাদের কেউই ত্রুটিহীন, নিষ্কলঙ্ক নয়। কিন্তু যখন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি সে প্রশংসাটা এমনকি যথাযথও হয় না। যখন আমি আপনার প্রশংসা করি, তখন আমি আপনার এমন ত্রুটি রয়েছে যা জানি না।
এজন্যই আমাদের বলা হয়েছে অন্য মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসা না করতে। কোন মানুষই শর্তহীন প্রশংসার যোগ্য নয়। যেমন বলা যেতে পারে আপনি কোন কোন সময় একজন দয়ালু মানুষ। কেউ সব সময় দয়ালু হতে পারে না। আপনি একজন ভদ্র মানুষ মাঝে মাঝে। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া কেউ শর্তহীন প্রশংসার যোগ্য নয়।
আমরা কখনওই আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করতে সমর্থ হব না। আল্লাহর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আমরা কখনওই সুবিচার করতে পারবো না। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে যে, রমজানের এক রাতে আয়েশা রা রাসুল স কে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে তিনি অন্ধকারের মাঝে রাসুল স এর পা স্পর্শ করলেন, আর তখন রাসুল স সেজদারত ছিলেন। আয়েশা রা শুনতে পেলেন রাসুল স সিজদায় বলছেন- ইয়া আল্লাহ, আপনি কতইনা মহান! আমি আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারব না। একটু থেমে চিন্তা করে দেখুন, কে কথা বলছেন? সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। আর কখন তিনি এ কথা বলছেন? তাহাজ্জুদের নামাজে সিজদারত অবস্থায়। ভাবতে পারেন? সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ইবাদাতের সময় সিজদারত অবস্থায় তিনি বলছেন, ইয়া আল্লাহ, আপনি কতইনা মহান! আমি আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারব না। যেকোনো শব্দই আমি উচ্চারণ করি না কেন তা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রে যথার্থ হতে পারে না। একমাত্র আপনিই আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারেন, ইয়া আল্লাহ।
এখন আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর সাথে এর সম্পর্ক কী? আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সমূহ হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশংসা। আল্লাহর এই নাম এবং গুণাবলী গুলোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই। এই জন্যই কুরআন মাজিদে আল্লাহ আমাদের ৪ বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন - وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا এই একই কথা আল্লাহ চার জায়গায় বলেছেন। আল্লাহর জন্যই সবচেয়ে মহৎ এবং নিখুঁত নাম সমূহ। 'আল আসমা আল হুসনা' আমি চাই আপনারা এই বাক্যাংশটি মুখস্ত করে রাখুন। আল আসমা আল হুসনা এর শাব্দিক বিশ্লেষণে বলা যায়, হুসনা শব্দটি 'আহসান' শব্দের স্ত্রীবাচক রূপ। আর 'আহসান' শব্দটির অর্থ আমরা সবাই জানি, এর অর্থ হলো - সবচেয়ে নিখুঁত। 'হাসান' মানে ভালো আর 'আহসান' মানে সবচেয়ে নিখুঁত। আল্লাহর নাম সমূহ 'হাসান' নয়- শুধু ভালো নয়, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। কোন কিছুই এর চেয়ে মহৎ, সুন্দর, নিখুঁত বা মহিমাম্বিত হতে পারে না। وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ আল্লাহর জন্যই সবচেয়ে মহৎ, নিখুঁত এবং সুন্দর নাম সমূহ। এখন এই নামগুলো দিয়ে আমরা কী করবো? আল্লাহ এর জবাবে বলছেন فَادْعُوهُ بِهَا এই নামগুলো ব্যবহার করে তাঁর নিকট দোয়া কর। আর দোয়া মানে শুধু হাত তুলে কিছু চাওয়া নয়, দোয়ার একটা অর্থ হলো - উপাসনা করা। সুতরাং এখন অর্থ দাঁড়ায়, এই নামগুলো ব্যবহার করে তাঁর উপাসনা কর। তাই আল্লাহর নাম এবং গুণগুলোর একটা অন্যতম উদ্দেশ্য হলো এই জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা ।
এই গোটা সিরিজে আমরা আল্লাহর একটি বা দুটি নাম নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা করবো। আজকে সর্বশেষ একটা হাদিস বলে শেষ করতে চাই, খুবই চমৎকার একটি হাদিস যা আমাদের অন্তরে আঘাত করা উচিত। এই হাদিস আমাদের শেখায় যে আল্লাহর নাম সমূহ সম্পর্কে জানাটা কত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। আর আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানার জন্য প্রচেষ্টা চালানো ঈমানের নিদর্শন। সহিহ বুখারিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, একজন সাহাবি ছিলেন যিনি নামাজের প্রতি রাকাতে সুরাতুল ইখলাস তিলাওয়াত করতেন, অন্য সুরা শুরু করার পূর্বে। তিনি প্রথমে সুরা ফাতিহা তারপর সুরা ইখলাস এবং তারপর অন্য একটি সুরা পড়তেন। অন্য মানুষরা এটা নিয়ে অভিযোগ করলো। তিনি অন্য একটি মাসজিদে ইমামতি করছিলেন। অন্য মানুষরা অভিযোগ করে বলল আমরা চাই না তুমি প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পড়, কিন্তু তিনি মানতে রাজী হলেন না। তিনি বললেন - আমি এভাবেই করবো, তোমাদের পছন্দ হলে আমাকে রাখো অথবা অন্য ইমাম খুঁজে নাও। আমি যা করি তা আমি পরিবর্তন করবো না। তখন তারা রাসুলুল্লাহ সঃ এর নিকট অভিযোগ করলো এবং বলল- ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই লোকটি প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরা তিলাওয়াতের মাঝখানে সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করে। তখন রাসুল সঃ বললেন - তাকে জিজ্ঞেস কর যে আমি জানতে চাই তার এটা করার কারণ কি? কেন সে প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করছে। তাই তারা তার কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করলো । তখন সে বলল, কারণ সুরা ইখলাসে আর রাহমানের পরিচয় পাওয়া যায়। এবং আমি আল্লাহর পরিচয় পড়তে ভালবাসি।
''বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।''
আমরা এগুলো সামনের দিনগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সুতরাং সে বলল, এতে আল্লাহর বর্ণনা পাওয়া যায়। আপনারা জানেন, এর পর রাসুল সঃ কি বললেন? ''তার কাছে ফেরত যাও, এবং তাকে বল- এই সুরার জন্য তার ভালবাসা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছে।'' কেন? কারণ আপনি যখন আল্লাহকে ভালবাসেন তখন আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। আর যখন আপনি আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী ভালবাসবেন, তখন এর প্রতিউত্তরে আল্লাহও আপনাকে ভালবাসবেন।
এই গোটা সিরিজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবো ইনশাআল্লাহ। এবং আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবো ইনশাআল্লাহ। যত বেশি নাম সম্ভব আমরা আলোচনা করবো। আর আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই জ্ঞানকে সবার জন্য উপকারী হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন। জাযাকুমুল্লাহু খাইর।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
প্রতি বছর রামাদানে আলোচনার জন্য আমরা একটা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করি। ইনশাআল্লাহ , এই বছর যে বিষয়বস্তুটি ঠিক করা হয়েছে তা এমন একটি মহত এবং গুরুত্ব পূর্ণ টপিক যা জানা এবং মুখস্ত করার জন্য প্রতিটি মুসলমানের সময় ব্যয় করা উচিত। আর সেই বিষয়টি হলো আল্লাহর কিছু সুন্দর নাম ও গুণ নিয়ে আলোচনা। আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহের আলোচনা কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ জানাই কুরআনের এমন তিনটি চারটি বা পাঁচটি আয়াত পড়ুন যেখানে আল্লাহর কোনো নাম বা গুণের উল্লেখ নেই । কারী সাহেব যখন নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করেন, আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনেন তাহলে দেখবেন কুরআনের প্রায় প্রতিটি আয়াতেই আল্লাহর কোন না কোন নাম বা গুণের উল্লেখ আছে। আর এ কারণেই প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর নামসমুহ ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জন করা আমাদের দ্বীনের একটি মৌলিক বিষয়। আর প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ কে ? এটা জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কি? ঈমানের প্রথম স্তম্ভ হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। তাহলে আল্লাহ কে? আল্লাহকে জানার একমাত্র উৎস হলো তাঁর নাম এবং গুণাবলীসমূহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানার আমাদের আর কোন উৎস নেই। এজন্য আমাদের আলেমরা বলে গেছেন, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হলো তৌহিদের অর্ধেক। আর তৌহিদের বাকি অর্ধেক হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। তাহলে তৌহিদ বলতে বুঝায় আল্লাহকে জানা এবং তাঁর ইবাদাত করা। তৌহিদ বলতে ঠিক এটাই বুঝায়। আমরা কালেমায় পড়ি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' - আপনাকে জানতে হবে আল্লাহ কে? তারপর তাঁর ইবাদাত করতে হবে। ইনশা আল্লাহু তায়ালা, তাই এই লেকচার সিরিজে প্রতিদিন আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি বা দুটি নাম নিয়ে আলোচনা করব।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন যে, আল্লাহর নাম সমূহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হলো সবচেয়ে মহত জ্ঞান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার চেয়ে পবিত্রতর এবং অধিকতর বরকতময় কিছু থাকতে পারে না। এর কারণ প্রত্যেক প্রকারের জ্ঞানের মর্যাদা নির্ধারিত হয় তাঁর বিষয়ের অনুপাতে। যেমন ডাক্তারি পেশাকে গাড়ির ইঙ্গিনিয়ারিং এর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও সমাজের গাড়ির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সমাজ কোন পেশাকে বেশি মর্যাদা দেয়? তাকে যে মানুষের শরীর নিয়ে অধ্যয়ন করে। কারণ, মানুষের যে কোন সৃষ্টির তুলনায় মানুষের শরীরের মর্যাদা বেশি। তাই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম এবং গুণাবলী নিয়ে অধ্যয়ন করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কি? যেহেতু আল্লাহ হলেন সবচেয়ে মহান, মহামহিম, তাবারাকা ওয়া তায়ালা - তাই এমন কোন জ্ঞানের অস্তিত্ব নেই যা আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর জ্ঞানের চেয়ে অধিকতর পুত-পবিত্র। আর এ কারণেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য। কুরআনে একটি আদেশ রয়েছে --- ই'লাম বা ই'লামু, এর অর্থ হলো শিক্ষা অর্জন কর এবং জানো। এটা কুরআনে প্রায় এক ডজন বা দুই ডজন বার বলা হয়েছে।
আর আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, এটা বলার পর অধিকাংশ সময় আল্লাহর একটি নাম বা গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন -- জানো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অতি দয়ালু। জানো যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা। জেনে রাখ যে , আল্লাহ ...... জেনে রাখ যে, আল্লাহ ...। তাই আমরা দেখতে পাই, কুরআনে জ্ঞানার্জন করার নির্দেশের পর পরই আল্লাহর কোন না কোন নাম এবং গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ চান যেন আমরা তাঁর সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করি। কিভাবে আমরা আল্লাহর ইবাদাত করার আশা পোষণ করতে পারি, যদি আমরা না জানি যে আল্লাহ কে?
কিভাবে আমরা আল্লাহকে ভালবাসবো যদি আমরা না জানি যে আল্লাহ কে? কিভাবে আমরা আল্লাহকে ভয় করবো যদি না জানি যে আল্লাহ কে? কিভাবে আমরা বিশ্বাস করবো, ভরসা করবো, যদি আল্লাহকে না জেনে থাকি। এ জন্য, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা আমাদের ঈমান এবং তাওহীদের কেন্দ্রীয় বিষয়। আমাদের আলেমরা বলে গেছেন আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলে আমাদের ঈমান যেভাবে বৃদ্ধি পায়, অন্য কোন উপায়ে তা এতো বৃদ্ধি পায় না। বিভিন্ন উপায়ে ঈমান বৃদ্ধি পায় যেমন- কোন ভালো কাজ করলে, কুরআন অধ্যয়ন করলে, দান- সাদকা করলে, কোন এতিমের দায়িত্ব নিলে… ইত্যাদি। এ সব কিছুই আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করে। কিন্তু সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দ্রুতগতির এবং সর্বাধিক ঈমান বৃদ্ধিকারী কাজ কী? আমাদের আলেমরা বলেন, সর্বাধিক ঈমান বৃদ্ধি কারী আমল হলো আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন অর্থাৎ রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন। এই দু'ধরনের জ্ঞান যেভাবে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করে অন্য কিছুতে সেভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই আবারও বলছি, আল্লাহ এবং তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা আমাদের বিশ্বাস এবং ইবাদাতের কেন্দ্রীয় উপাদান।
আর প্রিয় ভাই এবং বোনেরা আপনারা যদি এই বিষয়ে চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহর প্রতিটি নাম আমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে এমন জ্ঞান দিবে যা পূর্বে আমাদের জানা ছিল না। যখন আমরা এই নামগুলোর অর্থ জানবো যেমন আল মালিক, আল কুদ্দুস, আস সালাম, আল মুমিন, আল মুহাইমিন, আল আজিজ, আল জাব্বার, আল মুতাকাব্বির, আর রাউফ, আর রাহিম এবং আরও অনেক - এই প্রত্যেকটি নাম নিয়ে আসবে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন বিশ্বাস, নতুন ভালবাসা, নতুন আশা। এই নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার সাথে সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। যেমন আমি পূর্বেও বলেছি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা এই বিষয়টা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন, আমাদের রাসুল স উল্লেখ করেছেন যে, এমন কোন সত্ত্বার অস্তিত্ব নেই যিনি আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রশংসিত হতে ভালবাসেন। এ জন্য তিনি নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। আমাদের কেউ যখন আমাদের কারো প্রশংসা করে সে প্রশংসা পুরোপুরিসত্য হয় না। কারণ আমাদের কেউই ত্রুটিহীন, নিষ্কলঙ্ক নয়। কিন্তু যখন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি সে প্রশংসাটা এমনকি যথাযথও হয় না। যখন আমি আপনার প্রশংসা করি, তখন আমি আপনার এমন ত্রুটি রয়েছে যা জানি না।
এজন্যই আমাদের বলা হয়েছে অন্য মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসা না করতে। কোন মানুষই শর্তহীন প্রশংসার যোগ্য নয়। যেমন বলা যেতে পারে আপনি কোন কোন সময় একজন দয়ালু মানুষ। কেউ সব সময় দয়ালু হতে পারে না। আপনি একজন ভদ্র মানুষ মাঝে মাঝে। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া কেউ শর্তহীন প্রশংসার যোগ্য নয়।
আমরা কখনওই আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করতে সমর্থ হব না। আল্লাহর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আমরা কখনওই সুবিচার করতে পারবো না। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে যে, রমজানের এক রাতে আয়েশা রা রাসুল স কে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে তিনি অন্ধকারের মাঝে রাসুল স এর পা স্পর্শ করলেন, আর তখন রাসুল স সেজদারত ছিলেন। আয়েশা রা শুনতে পেলেন রাসুল স সিজদায় বলছেন- ইয়া আল্লাহ, আপনি কতইনা মহান! আমি আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারব না। একটু থেমে চিন্তা করে দেখুন, কে কথা বলছেন? সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। আর কখন তিনি এ কথা বলছেন? তাহাজ্জুদের নামাজে সিজদারত অবস্থায়। ভাবতে পারেন? সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ইবাদাতের সময় সিজদারত অবস্থায় তিনি বলছেন, ইয়া আল্লাহ, আপনি কতইনা মহান! আমি আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারব না। যেকোনো শব্দই আমি উচ্চারণ করি না কেন তা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রে যথার্থ হতে পারে না। একমাত্র আপনিই আপনার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে পারেন, ইয়া আল্লাহ।
এখন আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর সাথে এর সম্পর্ক কী? আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সমূহ হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশংসা। আল্লাহর এই নাম এবং গুণাবলী গুলোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই। এই জন্যই কুরআন মাজিদে আল্লাহ আমাদের ৪ বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন - وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا এই একই কথা আল্লাহ চার জায়গায় বলেছেন। আল্লাহর জন্যই সবচেয়ে মহৎ এবং নিখুঁত নাম সমূহ। 'আল আসমা আল হুসনা' আমি চাই আপনারা এই বাক্যাংশটি মুখস্ত করে রাখুন। আল আসমা আল হুসনা এর শাব্দিক বিশ্লেষণে বলা যায়, হুসনা শব্দটি 'আহসান' শব্দের স্ত্রীবাচক রূপ। আর 'আহসান' শব্দটির অর্থ আমরা সবাই জানি, এর অর্থ হলো - সবচেয়ে নিখুঁত। 'হাসান' মানে ভালো আর 'আহসান' মানে সবচেয়ে নিখুঁত। আল্লাহর নাম সমূহ 'হাসান' নয়- শুধু ভালো নয়, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। কোন কিছুই এর চেয়ে মহৎ, সুন্দর, নিখুঁত বা মহিমাম্বিত হতে পারে না। وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ আল্লাহর জন্যই সবচেয়ে মহৎ, নিখুঁত এবং সুন্দর নাম সমূহ। এখন এই নামগুলো দিয়ে আমরা কী করবো? আল্লাহ এর জবাবে বলছেন فَادْعُوهُ بِهَا এই নামগুলো ব্যবহার করে তাঁর নিকট দোয়া কর। আর দোয়া মানে শুধু হাত তুলে কিছু চাওয়া নয়, দোয়ার একটা অর্থ হলো - উপাসনা করা। সুতরাং এখন অর্থ দাঁড়ায়, এই নামগুলো ব্যবহার করে তাঁর উপাসনা কর। তাই আল্লাহর নাম এবং গুণগুলোর একটা অন্যতম উদ্দেশ্য হলো এই জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা ।
এই গোটা সিরিজে আমরা আল্লাহর একটি বা দুটি নাম নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা করবো। আজকে সর্বশেষ একটা হাদিস বলে শেষ করতে চাই, খুবই চমৎকার একটি হাদিস যা আমাদের অন্তরে আঘাত করা উচিত। এই হাদিস আমাদের শেখায় যে আল্লাহর নাম সমূহ সম্পর্কে জানাটা কত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। আর আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানার জন্য প্রচেষ্টা চালানো ঈমানের নিদর্শন। সহিহ বুখারিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, একজন সাহাবি ছিলেন যিনি নামাজের প্রতি রাকাতে সুরাতুল ইখলাস তিলাওয়াত করতেন, অন্য সুরা শুরু করার পূর্বে। তিনি প্রথমে সুরা ফাতিহা তারপর সুরা ইখলাস এবং তারপর অন্য একটি সুরা পড়তেন। অন্য মানুষরা এটা নিয়ে অভিযোগ করলো। তিনি অন্য একটি মাসজিদে ইমামতি করছিলেন। অন্য মানুষরা অভিযোগ করে বলল আমরা চাই না তুমি প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পড়, কিন্তু তিনি মানতে রাজী হলেন না। তিনি বললেন - আমি এভাবেই করবো, তোমাদের পছন্দ হলে আমাকে রাখো অথবা অন্য ইমাম খুঁজে নাও। আমি যা করি তা আমি পরিবর্তন করবো না। তখন তারা রাসুলুল্লাহ সঃ এর নিকট অভিযোগ করলো এবং বলল- ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই লোকটি প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরা তিলাওয়াতের মাঝখানে সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করে। তখন রাসুল সঃ বললেন - তাকে জিজ্ঞেস কর যে আমি জানতে চাই তার এটা করার কারণ কি? কেন সে প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করছে। তাই তারা তার কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করলো । তখন সে বলল, কারণ সুরা ইখলাসে আর রাহমানের পরিচয় পাওয়া যায়। এবং আমি আল্লাহর পরিচয় পড়তে ভালবাসি।
''বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।''
আমরা এগুলো সামনের দিনগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সুতরাং সে বলল, এতে আল্লাহর বর্ণনা পাওয়া যায়। আপনারা জানেন, এর পর রাসুল সঃ কি বললেন? ''তার কাছে ফেরত যাও, এবং তাকে বল- এই সুরার জন্য তার ভালবাসা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছে।'' কেন? কারণ আপনি যখন আল্লাহকে ভালবাসেন তখন আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। আর যখন আপনি আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী ভালবাসবেন, তখন এর প্রতিউত্তরে আল্লাহও আপনাকে ভালবাসবেন।
এই গোটা সিরিজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবো ইনশাআল্লাহ। এবং আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবো ইনশাআল্লাহ। যত বেশি নাম সম্ভব আমরা আলোচনা করবো। আর আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই জ্ঞানকে সবার জন্য উপকারী হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন। জাযাকুমুল্লাহু খাইর।
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق