মিনিমাম ফরজ সবার জন্যে এবং লোকদের লেভেল অনুযায়ী জ্ঞান ও আমলের ইলম দেওয়া
★★★★★★★★★★★★★★★
★★★★★★★★★★★★★★★
আবূ আব্দুল্লাহ্ জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ আল-আনসারী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত হয়েছে-
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলেন:
"আপনি কি মনে করেন যদি আমি ফরয নামায আদায় করি, রমযানে রোযা রাখি, হালালকে হালাল বলে ও হারামকে হারাম বলে ঘোষণা করি, আর এর বেশী কিছু না করি, তাহলে কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? তিনি বললেন: হাঁ।"
[চল্লিশ হাদীস (হাদীস – ২২), ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ, মুসলিম: ১৫]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম) সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন কুর'আন পড়াতে বলতেন যেন মানুষের উপর কষ্ট হয়ে না যায় এবং বেশি পড়ানোর দরূন কুরআনের উপর মানুষের বিরক্তি না আসে।
ইসলাম এমন যে এখানে সবাই জান্নাতে যাওয়ার মতো আমল করতে পারবে - রাস্তার কুলি বা রিকসাচালক যেমন সর্বোচ্চ জান্নাতে যেতে পারবে তার লেভেল অনুযায়ী নিষ্ঠার সাথে আমল করে, তেমনি বড় আলেমরাও হয়তো তাদের লেভেল অনুযায়ী অনেক বেশি দায়িত্বের কারণে আমল করে সেই একই জান্নাতে যাবে। যার যতটুকু যোগ্যতা ও দায়িত্ব সে অনুযায়ী-ই সে জিজ্ঞাসিত হবে ও পুরষ্কৃত হবে।
Islamic Scholars In Bangla
আল কুরআন কি সহজ? – উস্তাদ নুমান আলী খান
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
আমরা মুসলিম জাতি কোন বিষয়কে জটিল করতে ভালবাসি। কুরআন ভালবাসে সহজ করতে। ইবরাহিম (আলাইহিসালাম) কোন বিষয় সহজ করতে ভালবাসতেন। তিনি কোন বিষয়কে জটিল করতেন না। তাঁকে যে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল আমাদের সেই পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিনি সোজাসুজি কথা বলতেন। আমরা হচ্ছি তাঁর জাতি। আমাদের উচিৎ কোন বিষয়কে সহজ করে দেখা। এটা আমাদের শিখতে হবে। এই শিক্ষা নিতে হবে কুরআন থেকে। কুরআন সমস্ত বড় দার্শনিক ইস্যু, সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান দেয় নবীগণ যেভাবে দিয়েছেন সেইভাবে। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত পাঠ্যসূচি বদলিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মত করে নিই।
আপনি যদি ইসলাম এর আকিদা বিষয়ের উপর PHD করতে চান, করুন। খুব ভালো কথা। কিন্তু তার আগে আপনার উচিৎ হবে ইব্রাহীম আলাইহিসালাম এর আকিদার (বিশ্বাস) উপর শিক্ষা নিন। মহান আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ সূরা ফাতিহায় ঈমান কি তা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নিজের সম্পর্কে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। এটা কি যথেষ্ট নয়? আপনি হয়তো বলবেন আমি সূরা ফাতিহা পড়েছি কিন্তু আকিদা সম্পর্কে আরও বিশুদ্ধ ধারণা দরকার। মানুষজন হয়তো আপনাকে বলবে আকিদা সম্পর্কে জটিল বিষয়গুলো নিয়ে অভিজ্ঞ কোন শাইখের সাথে অলোচনা না করলে আপনার ঈমান মজবুত হবে না।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন রাসূল সালাল্লাহু আলাইহিসালাম একদা কুরআন পাঠরত অবস্থায় একদল জ্বিন তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা কূরআন এর আয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে অতীব সুন্দর কিছু কথা বল্লো। যা আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন।
জ্বিনরা কি অনেক বড় কোন আলেম, দাঈ ছিল বা নবীজির (রা:) সাথে সাথে থাকতো? না। এরা এ সবের কিছুই ছিল না। এরা ছিল ঈমানের অযোগ্য সাধারণ ছাত্র। মাত্র কয়েক মূহুর্ত কূরআন শুনে এরা এতটাই মুগ্ধ ও আশ্চর্যান্বিত হলো যে তারা কুরআন সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর কিছু কথা বললো আর এ কথাগুলো এতটাই মূল্যবান যে আল্লাহ তায়ালা সেগুলো কূরআনে সংরক্ষণ করলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তারা যেসব সহজ কথা বলেছেন, আল্লাহ সেগুলোর মর্যাদা দিয়ে কুরআনে স্থান দিয়েছেন, সেগুলোকেই আমরা আজ যা জটিল তাফসির আকারে পড়ছি! সহজ কথামালা হয়ে গেল জটিল। আল্লাহ্ সহজ সরলতা চান, মানুষ তাকে কঠিন করে।
আমরা জানি প্রতি শুক্রবার সূরা কাহফ পড়া সুন্নাহ। 'আসহাফুল কাহফ' তারা কি অনেক জ্ঞানী কোন জাতি ছিল? না। তাদের কোন নবী / রাসুল ছিল না। না ছিল তাদের কোন বড় আলেমসমাজ। ৬/৭ জন তরুণ বুঝতে পারলো যে মূর্তিপূজা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তারা মূর্তি পূজা করতে অস্বীকার করলো। ব্যাস, এই ঈমানের সরলতাকেই আল্লাহ এতটাই মূল্য দিলেন যে তাঁদের সেই সহজসরল কথাগুলোকেই তিনি শিক্ষা আকারে আমাদের জন্যে কুরআনে স্থাপিত করে দিলেন।
আজ আমরা তাঁদের পড়ি, বিশেষ করে ফিৎনার কালে সূরা কাহফ পড়া উচিৎ। তরুণেরা ছিল সাধারণ ঈমানের অধিকারী কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের হিরো করে রাখলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সম্মান দিয়ে তাদের কথা মানুষকে জানালেন। কত সাধারণ মানুষ! অথচ হয়ে গেল মহানায়ক! কাউকে কোনো বইতে উল্লেখ করা সম্মানের, আর আল-কুরআনে উল্লেখ করাটা তো বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আল্লাহ তাঁদের উল্লেখ করেছেন, তাঁদের ঈমানের কারণে। আল্লাহ সহজতা ভালোবাসেন, আমরাই কঠিন করে ফেলি।
আপনি কি কুরআন পড়েছেন? এর তাফসির? তাফসিরের তাফসির?!! ঐ তাফসিরের আবার টীকা-ভাষ্য?! আপনি যদি ইসলামি বিষয়ে পিএইচডি করতে চান, ওকে, যান, কিন্তু এটা সাধারণ জনগণের জন্যে নয়; তাঁদের জন্যে আল্লাহর কালাম রাখুন। উলামারা গভীরে যাবেন, সেটা অবশ্যই ঠিক আছে, কিন্তু সাধারণদের জন্যে আল্লাহর কালাম। আল্লাহ বলেন, কালিমাতুল্লাহি হিয়াল উলইয়া – আল্লাহর কালাম সর্বোচ্চে। এটাই ঠিক, আল্লাহর কালাম প্রথমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, অন্যসব কিছু পরে আসবে। আপনি আল্লাহর কালাম দিয়েই শুরু করুন। ‘ফাবি যালিকা ইয়াফরাহু’ – এর অর্থের প্রতি লক্ষ্য করুন মনযোগ দিয়ে, ‘এই কুরআনের জন্যে তাঁদের আনন্দিত হওয়া উচিৎ’। এর মানে আরো কিছু। আপনি যখন আল্লাহর কিতাব ছেড়ে অন্যকিছু দিয়ে দ্বীন শেখা শুরু করবেন, আপনি অন্যকিছু দিয়ে এর শেষ করবেন। আপনি এমন কিছু শিখবেন যা আপনাকে রাগান্বিত করবে পাশের মানুষের সাথে, অথবা অন্যরা আপনার সাথে এসব বিষয় নিয়ে রাগান্বিত হবে। আপনি ইসলামের রাগান্বিত বিষয় শেখা শুরু করবেন যদি না আল্লাহর কিতাব দিয়ে শুরু না করেন।
আপনি যখন আল্লাহর কিতাব দিয়ে দ্বীন বোঝা শুরু করবেন, এটা আপনার মাঝে আনন্দ নিয়ে আসবে, আপনার আশ-পাশের মানুষের মাঝেও এই সুখিতা নিয়ে আসবে। এটা আপনাকে সুখী করবে, পাশের মানুষদেরও সুখী করবে। সবকিছুর চাইতে আল্লাহর কালামই উত্তম।
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
অনুবাদঃ সারাহ ইসলাম
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق