الخميس، 14 أغسطس 2025

~~ আল্লাহর উপর আশা ধরে রাখা ~~

 Bookish Publisher

3 ي 
~~ আল্লাহর উপর আশা ধরে রাখা ~~
আল্লাহর উপর ভরসা ধরে রাখা আজকের দিনে অনেকের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। অনেকের জন্য এই বিষয়টা মেনে নেয়া বেশ কঠিন যে, আল্লাহ তার কথা শুনবেন। তারা হয়তো অনেক লম্বা সময় ধরে কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তারপর তারা মনে মনে ধরে নেন যে,
❛আল্লাহ আমার কথায় কোনো মনোযোগ দিবেন না। আমার দু’আ তাঁর নিকট গুরুত্বহীন। আমি দু’আ করার কোনো অর্থ দেখি না।❜
আপনাদের একটা কথা বলে রাখি,
আল্লাহর নিকট থেকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ যে উপহারটি পাবেন, সেটা কী জানেন? ক্ষমা পাওয়া। ক্ষমা পাওয়া মানেই তাঁর রহমতের মাঝে প্রবেশ করা। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার; আপনি এটার মূল্য উপলব্ধি করুন আর না-ই করুন। আর বাকী যাকিছু আল্লাহ আপনাকে দিবেন বলেছেন, তা সবই অতিরিক্ত।
আপনাদের একটা উদাহরণ দেই। আমার কয়েকজন সন্তান আছে। ধরুন, আমার এক সন্তানের উপর আমি খুবই অসন্তুষ্ট। সে কোনো একটা অন্যায় করেছে, তাই খুব রেগে আছি। ❝তোমার এটা বলা উচিত হয়নি। তোমার এটা করা উচিত হয়নি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তুমি এটা করেছো।❞ এভাবে আমি তাকে কিছুটা বকাঝকা করলাম।
তারপর দিনের অন্য একসময় আমার জন্য তার কিছু একটা করার কথা। যেমন, আমার জন্য একটা কার্ড আঁকার কথা যাতে লেখা থাকবে 🙶বাবা, আমি আপনাকে ভালোবাসি।🙷 সে জিনিসটা আঁকলো। কিন্তু পরে কী মনে করে কাগজটা টুকরা টুকরা করে ময়লার বাক্সে ফেলে দিলো। এটা দেখে তার অন্য ভাই বললো,
—“কী! তুমি এটা ফেলে দিলে কেন? তোমার না এটা বাবাকে দেখানোর কথা।”
জবাবে সে বললো,
—“বাবা আমার উপর খুবই রাগান্বিত। তিনি এটার প্রতি কোনো গুরুত্ব দিবেন বলে মনে হয় না। তিনি আর আমাকে ভালোবাসেন না।”
আমি যদি জানতাম বিষয়টাকে সে এভাবে দেখছে, তাহলে আমি কী করতাম? আমি কি এভাবে বলতাম?
—“হ্যাঁ, ফেলে দাও। আমার এসবের কোনো দরকার নেই।”
না, আমি বরং আবেগে কেঁদে ফেলতাম।
🙶কীভাবে তুমি ভাবতে পারলে আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না? হ্যাঁ, তুমি অন্যায় করেছো, ভুল করেছো কিন্তু তুমি এখনো আমার সন্তান। তুমি হাজারবার ভুল করলেও আমি তোমাকে ভালোবাসবো। যদিও আমি তোমার উপর রাগান্বিত কিন্তু তোমাকে এখনো আমি ভালোবাসি। আমাকে ঐ কার্ডটি দাও। আমি সেটা ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখবো। ময়লার বাক্স থেকে নিয়ে গ্লাসের ফ্রেমে টাঙ্গিয়ে রাখবো। সারাজীবন ধরে যত্ন করে রাখবো।🙷
কেন? কারণ তারা যতই ভুল করুক তবুও আমি আমার সন্তানদের ভালোবাসি, যদিও তাদের আচার-আচরণ আমাকে রাগান্বিতও করে। এটা শুধু আমার ও আমার সন্তানের সম্পর্ক।
কিন্তু এখানে আমি আমার সন্তান নিয়ে কথা বলছি না। এই উদাহরণের মাধ্যমে আমি আমার আর আল্লাহর সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছি। আমি আল্লাহর অবাধ্যতা করি। ভুল করি। তবুও আল্লাহ আমাকে বকাঝকা করেন না। আমি ভুল করার কারণে তিনি আমার উপর বজ্রপাত করেননি। আমাকে এক্ষণি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেননি। আমার হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ করে দেননি। যখনি আমি মিথ্যা বলি তাৎক্ষণিক আমি বোবা হয়ে যাই না।
প্রতিবার হারাম কিছু খেয়ে ফেলার কারণে আমার হাত অবশ হয়ে যায়নি। হারাম কিছুর দিকে তাকানোর কারণে আমি অন্ধ হয়ে যাইনি। তিনি এখনো আমাকে নেয়ামত দিয়ে যাচ্ছেন। আর আমি কিনা চিন্তা করতে শুরু করলাম 'আল্লাহ আমাকে আর ভালোবাসেন না! আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ক একসময় ভালো ছিল, কিন্তু এখন যেহেতু খারাপ হয়ে গিয়েছি তাই তাঁর ভালোবাসাও বুঝি হারিয়ে গেছে! এমন হলে দু’আ করারই-বা কী অর্থ আছে?'
মনে রাখুন, আল্লাহর মতো কেউ আপনাকে ভালোবাসে না। আমি আমার সন্তান বা পিতা-মাতার প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করি, সেটা আল্লাহ তা’আলাই আমার ভেতরে অল্পখানি দিয়েছেন। আমরা এমনি এমনি কাউকে ভালোবাসতে সক্ষম নই।
ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। যদি আল্লাহর দুটি সৃষ্টির মাঝে ভালোবাসা এতো দৃঢ় হয়, তবে আমাদের পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয় যে আমাদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা কতটা প্রগাঢ়, কত গভীর।
আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারাবেন না। এখনি ফিরে আসুন, তাঁর প্রতি ভরসা ধরে রাখুন—তাঁর মতো কেউ আপনাকে ভালোবাসে না, বাসতে পারবেও না।
কেউ এর বিপরীত বললে তার কথায় কান দিবেন না। একমাত্র যে মনে করে আল্লাহ তাকে ঘৃণা করে, তার আর কোনো আশা নেই, সে হলো শয়তান। সে এটা বিশ্বাস করে। তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তার সকল আশা হারিয়ে গেছে, সে নিজের সম্পর্কে এটা মেনে নিয়েছে।
এখন আপনি যদি নিজের সম্পর্কে এরকম মনে করেন তাহলে আপনি কার পথ অনুসরণ করছেন? একবার চিন্তা করে দেখুন। আদম (আ.) জান্নাতে ছিলেন। জান্নাতের চেয়ে উত্তম কোনো জায়গায় তো আপনার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। তারপর তিনি একটি ভুল করলেন আর আল্লাহ তা’আলা তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিলেন।
এখন আদম  যদি এরকম চিন্তা করতেন—❛আমার এতো বড় অবনতি হয়ে গেলো যে আল্লাহ আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন, আমি কীভাবে আল্লাহর সাথে আবার কথা বলবো? আমি তাঁকে এতো হতাশ করার পর কীভাবে তাঁর কাছে চাইব?❜
আল্লাহ তাঁকে শিখিয়ে দিলেন কী করতে হবে, কীভাবে তার অন্তর আবার ঠিক করতে হবে।
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخٰسِرِينَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর আর দয়া না কর তাহলে আমরা অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
[সূরা আরাফ : ২৩]
আপনি যদি বেশ ভালো জায়গায় থাকেন, তারপর কোনো খারাপ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেটা জান্নাতের তুলনায় দুনিয়া তো কিছুই না। অথচ আদম ও হাওয়া (আ) জান্নাত থেকে দুনিয়ায় এলেন। এতো দূরে নেমে আসা সত্ত্বেও এখনো তিনি আল্লাহর নিকটেই আছেন। এই শব্দগুলোই আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক আবার জুড়ে দিলো। তাই দু’আ ও আশার উপর আস্থা হারাবেন না।
আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে কীভাবে দু’আ করবেন তার প্রস্তুতি এখনই শুরু করুন। মনে রাখুন, আল্লাহ আপনাদের সবার দু’আ শুনবেন।
أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
আমি প্রত্যকে আহবানকারীর প্রতিটি ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। [সূরা বাকারা : ১৮৬]
এটা আল্লাহর অঙ্গীকার।
আমি আপনি এক নাম্বার যে দু’আটি করবো তা হলো—ক্ষমা চাওয়ার দু’আ। আল্লাহ আমাদেরকে এমন মানুষে পরিণত করুন যারা সত্যিকারার্থে ক্ষমা চায়।
আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই। আল্লাহ তা'আলা অনেক পথভ্রষ্ট জাতিকে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকেন। কেন জানেন? কারণ সেখানে এমন মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়। শুধু তাদের মাঝে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা এখনো আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তাদের কারণেই আল্লাহ গোটা জাতিকে আর ধ্বংস করেন না। ইস্তিগফার করা মানুষে পরিণত হোন, আল্লাহর প্রতি আশা হারাবেন না কখনই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।
আল্লাহ আমাদের অন্তরে তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করার তীব্র ব্যাকুলতা তৈরী করে দিন। আল্লাহ আমাদের অন্তরকে এমন নরম করে দিন যেন আমাদের চোখ দিয়ে অশ্রু নেমে আসে, আমরা যেন আমাদের সবার জন্য তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের জন্য তাঁর রিজিকের দরজা খুলে দিন এবং আমাদের সমস্যার সমাধানের পথ উন্মুক্ত করে দিন।
বই : আমি ও আমার রব
মূল : উস্তাদ নোমান আলী খান
জীবনের স্থিরতা, প্রশান্তি, প্রোডাক্টিভ ও শৃংখলাপূর্ণ করাটা আল্লাহর রহমত। যেই জীবন আল্লাহ থেকে দূরে, যেই জীবন অস্থিরতায় পূর্ণ, যেই জীবনে প্রশান্তি নেই, সেই জীবনের অর্থ ও পূর্ণতা নেই। আল্লাহ আমাদের জীবনে যেন সেই স্থিরতা ও প্রশান্তি দেন। সেই প্রশান্তি, স্থিরতা ও প্রোডাক্টিভ জীবনের জন্য সংগ্রহ করতে পারেন আমাদের এই বইগুলো।
১ । প্রশান্তির খোজ : ১ উস্তাদ নোমান আলী খান
২। প্রশান্তির খোজ : ২ উস্তাদ নোমান আলী খান
৩। কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়? : মিশারী আল-খারাজ
৪। আমি ও আমার রব : উস্তাদ নোমান আলী খান

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق