السبت، 1 نوفمبر 2025

সূরা আল-মু'মিনুনের শুরুতে বিশ্বাসীদের কিছু বৈশিষ্ট্য

 Nouman Ali Khan Collection In Bangla

 
সূরা আল-মু'মিনুনের শুরুতে বিশ্বাসীদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। সূরাটির শেষের দিকে গেলে আমরা দেখবো, শেষ দিকেও মু'মিনদের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। আমরা প্রথম প্যাসেজটি নিয়ে বহু আলোচনা শুনেছি। কিন্তু অধিকাংশ সময় শেষ দিকে উল্লেখিত যোগ্যতাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় না। যা আলোচনাটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দান করে। সূরাটির শেষে গেলে আমরা সেগুলো নিয়েও আলোচন করবো।
এখন চলুন, প্রথম দিকে উল্লেখিত মুমিনদের কোয়ালিটিগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ - মু’মিনরা সফল হয়ে গেছে।
আয়াতের শুরুতে 'কাদ' শব্দটি খেয়াল করেছেন? কোনোকিছু ইতোমধ্যে ঘটে গেছে এমন বুঝাতে বা নিশ্চয়তা বুঝাতে 'কাদ' ব্যবহৃত হয়। আমরা ভাবি, সত্যিকারের বিশ্বাসীরা ভবিষ্যতে জান্নাত অর্জন করবে। কিন্তু, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই আয়াতে বলছেন, তোমাদের যদি সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে থাকে তাহলে তোমরা ইতোমধ্যেই সফলতা অর্জন করে ফেলেছ।
সফলতা অর্থ বুঝাতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তার দিকেও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। ফাল্লাহ অর্থ কৃষক। কৃষক কোদাল দিয়ে বীজ বপনের জন্য যে মাটি খোঁড়ে, এই কাজটাকেও ফাল্লাহ বলা হয়।
এই দৃশ্য থেকে কিভাবে শব্দটি সফলতার জন্যে ব্যবহার করা হয়? কারণ, প্রথমে যখন সে মাটি কেটে বীজ বুনার জন্য জমিন প্রস্তুত করে, এটা একটা সফলতা। এরপর তাকে সারা বছর জমিতে শ্রম দিতে হয়। অতঃপর, সবশেষে যদি সে আবার মাটি খুঁড়ে ফসল তুলে আনে, এর মানে, সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পোকামাকড়ে ফসল খেয়ে ফেলেনি, খরা হয়নি, গাছগুলো সঠিক পরিমাণে তাপমাত্রা পেয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়াতে শেষ পর্যন্ত সে তার কষ্টের ফসল তুলতে পারলো।
কৃষি খুবই কঠিন একটি পেশা। অন্য পেশায় মানুষ যেমন মাস শেষে বেতন পায়, কৃষক কিন্তু তা পায় না। তার সারা বছরের বেতন নির্ভর করে বছর শেষে সে কতটুকু ফসল উৎপাদন করতে পারলো তার উপর। এ কারণে সমগ্র দুনিয়াজুড়ে ফসল তোলার সময় কৃষি সমাজ বিভিন্ন ধরণের উৎসবের আয়োজন করে। এটা তাদের আনন্দের সময়। কারণ বড় অঙ্কের একটি চেক পাওয়ার সময় এটা।
ঠিক এ ব্যপারটাকেই একজন ঈমানদারের জীবনের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। ব্যাপারটা যেন এমন, আমরা কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি সমগ্র জীবন ধরে, আর জীবন শেষ হয়ে গেলে, আসল পুরস্কার পাওয়ার সময় আসবে। কিন্তু, আল্লাহ এখানে বলছেন, কাদ আফ্লাহা- তাদের ফসল তোলার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা কৃষকের মত অনিশ্চিত নয়। কৃষক নিশ্চিত থাকে না যে, বছর শেষে সে ফসল তুলতে পারবে কিনা। যদি সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে এর নাম ইফ্লাহ। কিন্তু, ঈমানদারদেরকে এ সফলতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। কাদ আফ্লাহা- মুমিনরা সফল হয়ে গেছে।
চলুন, এখন 'আল-মু'নিনুন শব্দটির প্রতি মনোযোগ প্রদান করি। আমরা কুরআনে এ সম্পর্কিত আরেকটি পরিভাষাও পাই। "আল্লাজিনা আমানু"। আল্লাহ এখানে ''কাদ আফ্লাহাল্লাজিনা আমানু'' বলেননি। তিনি বলেছেন- কাদ আফ্লাহাল মু'মিনুন। উভয়ের মাঝে পার্থক্য আছে।
'আমানু' একটি ক্রিয়াপদ। অতীতকালীন ক্রিয়াপদ। আর 'মু'মিনুন' হলো বিশেষ্য বা নাউন। আরবি ব্যাকরণে ইস্লমে ফায়েল। ইংরেজিতে একে active participle বলা হয়। (Doer Noun) ঈমানদারেরা।
ভাষাতত্ত্বে verb বা ক্রিয়াপদকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হয়। আর noun বা বিশেষ্যকে স্থায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে যখন বলা হয়- আল্লাজিনা আমানু অর্থাৎ যারা ঈমান এনেছিল। এর দ্বারা বর্তমানে তাদের ঈমান আছে এমন গ্যারান্টি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভবিষ্যতে তাদের ঈমান থাকবে এরও গ্যারান্টি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রিয়াপদ ভঙ্গুর, অস্থিতিশীল।
কিন্তু নাউনের তো কোনো past tense, present tense বা future tense নেই। যেমন, Apple একটি Noun. এর কোনো পাস্ট টেনস, প্রেসেন্ট টেনস বা ফিউচার টেনস নেই।
তাই, বিশ্বাসীদের যখন 'মু'মিনুন' বলা হচ্ছে; তাদের জন্য যখন নাউন ব্যবহার করা হচ্ছে- ব্যাপারটা এমন যেন তাদের ঈমানকে এক ধরণের স্থিতিশীলতা প্রদান করা হচ্ছে। এটাকে নিরন্তর একটি জিনিস হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
চলুন, একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টাকে আরও ভালোভাবে বুঝি। "আল্লাজিনা আমানু"- আল্লাজিনা অর্থ যারা। আমানু অর্থ ঈমান এনেছিল। যারা ঈমান এনেছিল। যখন এভাবে ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয় তখন ব্যাপারটা এমন যেন- কেউ নদীতে পড়ে গেছে। আর সে একবার ডুবছে একবার উঠছে। কখনো তার মাথা পানির উপরে উঠে আসছে আবার কখনো তা ডুবে যাচ্ছে। তাদের ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।
আর মু'মিনুন অর্থাৎ যখন নাউন ব্যবহার করা হয়- তখন এমন ঈমানদারদের কথা বলা হচ্ছে যারা নৌকাতে আছে। হ্যাঁ নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে ধুলতে থাকে কিন্তু নৌকাটা সর্বদা কোথায় আছে? পানির উপর।
অর্থাৎ, এ ধরণের মানুষেরা সৎকর্মের ক্ষেত্রে, ইবাদাতের ক্ষেত্রে এক ধরণের উন্নত মান সবসময় বজায় রাখে। এরাই হলো আল-মু'মিনুন। হ্যাঁ, তাদেরও ভালো দিন খারাপ দিন আসে। কিন্তু, তারা নির্দিষ্ট একটি রেখা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। ঐ রেখার ভেতরেই তারা থাকে। এজন্যই তারা এ অসাধারণ টাইটেল 'আল-মু'মিনুন' অর্জন করতে পেরেছে। সত্যিকারের বিশ্বাসীরা।
তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী আয়াতগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। নিজেকে এগুলোর আলোকে পরীক্ষা করে দেখুন। আমার অবস্থান কোথায়? নিম্নে বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো।
১। তারা নিজেদের নামাজে খুশু বজায় রাখে।
২। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ।
৩। আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। এর আরেকটি অর্থ হলো- যারা নিজেদের পরিশুদ্ধ করার কাজে সক্রিয়। অন্য কথায়, তারা বুঝতে পারে আমার ব্যক্তিত্ব অশুদ্ধ, এর নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা রয়েছে। হয়তো আমার রাগের সমস্যা আছে, আমি হয়তো মানুষকে মাফ করতে পারি না। কেউ কষ্ট দিলে তা হয়তো ভুলতে পারি না। আমি হয়তো বুঝতেও পারি না যে, কথা বলার সময় আমি মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। আমি হয়তো বিনোদনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে ফেলি। এই আয়াতটি কিভাবে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করবেন? নিজের ব্যাপারে যে বিষয়গুলো অপছন্দ করেন তার একটি লিস্ট তৈরি করুন। আর আপনি নিশ্চিত যে, এগুলো আল্লাহও পছন্দ করেন না। এরপর এগুলো দূর করার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করুন।
৪। আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। যারা অশ্লীলতা থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলে।
৫। আর যারা নিজেদের আমানাত ও ওয়াদা পূর্ণ করে।
৬। আর যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে যত্নবান। (দৈনিক নামাজগুলো ঠিকভাবে আদায় করে।)
তারাই হল উত্তরাধিকারী। তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।
প্রথম বৈশিষ্ট্যটি হলো— বিশেষ করে তারা তাদের নামাজে খুশু বজায় রাখে।
এখানেও একটি ব্যাপার লক্ষ্য করুন। আল্লাহ এখানেও খুশু বর্ণনা করতে ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেননি। তিনি নাউন বা বিশেষ্য ব্যবহার করেছেন। নাউন দ্বারা কী বুঝানো হয়? স্থায়িত্ব।
তারা তাদের ঈমানের ক্ষেত্রে এমন একটি পরিপক্কতায় পৌঁছে গেছে যে, প্রতিবারই যখনি তারা নামাজ আদায় করে, বিশেষ করে যখন তারা নামাজ আদায় করে তখন খুশু সেই নামাজের একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হয়। এখন, আমার আপনার জন্য হয়তো আমাদের নামাজের সমগ্র সময়টাতে ওযু একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য, কিবলার দিকে মুখ করে থাকাটা একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য। সম্ভবত খুশু একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য নয়। আমার প্রতিটি নামাজে।
এখন চলুন, খুশু কী তা জানার চেষ্টা করি। আরবি 'খাসাআ'—যেখান থেকে খুশু শব্দটি এসেছে—মানে, যখন আপনি এতটাই ভীত হয়ে পড়েন, যে ভয় আপনাকে এতোটাই অভিভূত করে ফেলে যে, আপনার পেশীগুলো অসাড় হয়ে পড়ে।
একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টা বুঝি। মনে করুন, কেউ একজন একদিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে আর সে বুঝতে পারেনি যে, অন্যদিক থেকে দ্রুত গতিতে একটি ট্রাক তার দিকে ছুটে আসছে। সে মুখ ঘুরিয়ে দেখে যে ট্রাকটি ঠিক তার সামনে!! ট্রাজেডি ঘটার ঠিক কয়েক সেকেন্ড পূর্বে তার মুখের অবস্থা এবং ঘটনার আকস্মিকতায় যে সে পুরোপুরি ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলো—এটা এক ধরণের খুশু। আপনি সম্পূর্ণরূপে বশীভূত হয়ে পড়েন।
এটাই এ সমস্ত মুমিনদের অবস্থা। তারা নামাজে দাঁড়ালে আল্লাহর ভয়ে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়ে, বশীভূত হয়ে পড়ে, নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পন করে দেয়।
সূরাতুল আ'রাফে বনি ইসরাইলের একটি ঘটনার কথা এসেছে। বনি ইসরাইলের নেতৃবৃন্দ মূসা (আ) এর সাথে আসেন। আর আল্লাহ এখন তাদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য দিবেন। যেন আল্লাহর কথাগুলো তারা খুবই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে এজন্য আল্লাহ একটি পর্বতকে তুলে নিয়ে তাদের মাথার উপর ঝুলিয়ে রাখেন। যেন এক খণ্ড মেঘ। ভাবতে পারেন? তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন ছিল? তারা কতটা ভীত বিহ্বল হয়ে পড়েছিল! এর নাম খুশু।
আল্লাহ বলছেন মুমিনরা এরকম খুশুর অনুভূতি লাভ করে কোথায়? বিশেষ করে তাদের নামাজে। আমি এখানে বিশেষ করে যোগ করছি, আরবি ব্যাকরণের নিয়মের কারণে। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে, এই ভয়ের অনুভূতি শুধু নামাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। হয়তো বাহিরে এটা স্থায়ী অনুভূতি নয়। কিন্তু নামাজের সময়টাতে এটি একটি স্থায়ী অনুভূতি।
এখন দেখুন, এরকম অনুভূতি নিয়ে যদি একবার আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতে যান, তাহলে এর প্রভাব কয়েক ঘন্টা বহাল থাকবে। এরপর পরবর্তী নামাজে আবার এরকম অনুভূতি নিয়ে হাজিরা দিলে আবার এর প্রভাব আরো কয়েক ঘন্টা বহাল থাকবে। দুই নামাজের মাঝখানের সময়গুলোতে এভাবে নামাজের প্রভাব পড়ার কথা।
সালাত আসলে দুটি অনুভূতির সমষ্টি। আনন্দ এবং দুঃখ। আনন্দ কারণ আমি আমার রবের সাথে কথা বলছি। আর দুঃখিত কারণ "ইয়া আল্লাহ! আমি কিছু ভুল করে ফেলেছি। ইয়া আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন। "
আমাদের নামাজগুলো যেরকম হওয়ার কথা তার থেকে আমরা কত দূরে!!
দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্যটি বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো— وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ - "আর যারা অনর্থক কথাকর্ম এড়িয়ে চলে।"
আরবিতে اللغو মানে এমন কর্মকাণ্ড যা দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো উপকার তৈরী করে না এবং যা পারলৌকিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কোনো উপকার তৈরী করে না। এটা সাধারণত কথাবার্তা কিন্তু অন্য কার্যক্রমও হতে পারে।
যেমন, বসে বসে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিহ্বা চালাতে থাকলেন। যুবক বয়সে অযথা বকবক করাতে আপনি বেশ পটু থাকেন। বন্ধুদের সাথে রাত কাটাতে চলে গেলেন। "বুঝতে পারছি না কিভাবে রাতটা পার হয়ে গেল!"
বন্ধুদের সাথে কথা বলতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সারাক্ষণ বকবক করা!!
ফোনটা তুলেই
— দোস্ত জানিস কি হয়েছে? ঐ লোকটা কি করেছে?
— ও তাই নাকি? বল তো কি হয়েছে।
এভাবে শুরু হয়ে গেলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এই মানুষগুলো যারা আল্লাহর সাথে কথা বলার একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তারা কথার মূল্য বুঝতে পারে। তারা বুঝতে পারে আমাদের জিহ্বা ব্যবহার করতে পারার সামর্থ্যটা যে কত বড় একটি ব্যাপার! অন্য প্রাণীদের তো এই সামর্থ্য নেই। (আল্লাহ নিজেই এ ব্যাপারটি কুরআনে তুলে ধরেছেন। তিনি সুরাতুর রাহমানে বলেন— عَلَّمَهُ الۡبَیَانَ - তিনিই মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন।) তাই, মুমিনরা ইচ্ছে করেই অর্থহীন কথাবার্তা এড়িয়ে চলে।
তারা এমনকি বসে বসে অন্যদের অর্থহীন বকবকও শুনে না। তারা এ'রাদ করে অর্থাৎ তারা এদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে। তারা এদের উপেক্ষা করে। তারা এমন পরিস্থিতি বর্জন করে চলে।
আরবি اللغ দ্বারা কার্যক্রমও বুঝায় যা কোনো ধরণের উপকার তৈরি করে না। আপনি হয়ত সবসময় এগুলো থেকে বিরত থাকতে পারবেন না। কিন্তু এরকম নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম আপনাকে শনাক্ত করতে হবে যা 'লাগউ' এর সহজ উদাহরণ হতে পারে। কোনো ভিডিও গেইমের প্রতিটি লেভেলে সর্বোচ্চ স্কোর করতে না পারলে যদি আপনার রাতে ঘুম না আসে তাহলে আপনার 'লাগউ' এর সমস্যা আছে। গেইমটা আপনাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।
যেমন, মানুষ ডাক্তারের চেম্বারের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করছে। পাঁচটা মিনিট সময়ও ভিডিও গেইম খেলা ছাড়া ব্যয় করতে পারে না। গাড়ির পেছনে বসে বসেও মানুষ একই কাজ করে। যেকোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করার সময় এ কাজ করে তারা। যেকোনো ফ্রি সময় পেলেই তা এ কাজে ব্যয় করে।
একজন ঈমানদার তার যেকোনো ফ্রি সময় কোন কাজে ব্যয় করার কথা? আল্লাহর জিকিরে। সময়টা ব্যয়িত হওয়ার উচিত আমাদের আখিরাত গড়ার কাজে। আর দুঃখজনকভাবে আমাদের ফ্রি সময়গুলো মোবাইল ফোনের পেছনে চলে যাচ্ছে।
এভাবে ভিডিও গেইমের আসক্তি নিয়ে যদি নামাজ পড়তে যান তখন নামাজেও হয়তো মনে মনে গেইম খেলছেন। নামাজে খুশু তৈরি হচ্ছে না।
যদি দেখেন যে আপনি প্রচুর পরিমাণে কথা বলেন, তখন হয়তো লক্ষ্য করেছেন আপনার নামাজে কোনো খুশু নেই। একটির ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয়টি ঘটে। আর দ্বিতীয়টি প্রথমটির প্রমাণ। যদি কথা কম বলেন তাহলে চিন্তা করার সময় পাবেন। নামাজে খুশু তৈরি হবে। আর নামাজের বাহিরে নিজের জন্য চিন্তা করার সময় পাবেন এবং এভাবে আপনি একজন চিন্তাশীল মানুষে পরিণত হবেন।
- নোমান আলী খান
সূরাটির শেষ দিকে জাহান্নামিদের ভয়াবহ শাস্তির এক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি শায়েখ ওমর আল বান্না তার 'জাহান্নাম' লেকচারে তুলে ধরেছেন। তার অনুবাদ নিচে উপস্থাপিত হলো।
জাহান্নামীরা অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে দোজখের প্রধান ফেরেশতা মালিক কে ডেকে বলবে- لِیَقۡضِ عَلَیۡنَا رَبُّکَ ؕ قَالَ اِنَّکُمۡ مّٰکِثُوۡنَ - ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা এখানেই পড়ে থাকবে।"(৪৩:৭৭)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকরা বলেন, পরকালের এক হাজার বছর ধরে জাহান্নামীরা দোজখের প্রধান ফেরেশতা মালেককে ডাকতে থাকবে। সূরা হজ্জের ৪৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন- "আর তোমার রবের নিকট নিশ্চয় এক দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।"
তাহলে ১০০০ * ১০০০ কত হয়? ভাবতে পারেন? আপনি ১০ লক্ষ বছর ধরে একজনের সাথে একটু কথা বলার জন্য অনুরোধ করছেন। ওয়া নাদাও ইয়া মালেক! ইয়া মালেক! ইয়া মালেক! লিয়াকদি আলাইনা রাব্বুক। লিয়াকদি আলাইনা রাব্বুক। লিয়াকদি আলাইনা রাব্বুক। লিয়াকদি আলাইনা রাব্বুক। প্লিজ আল্লাহকে বল আমাদের ধ্বংস করে দিতে। প্লিজ আল্লাহকে বল আমাদের ধ্বংস করে দিতে। (৪৩:৭৭)
১০ লক্ষ বছর পরে মালিক তাদের দিকে ফিরে বলবে, 'ইন্নাকুম মা-কিসুন- তোমরা এখানেই পড়ে থাকবে।' দুইটা শব্দ। ইন্নাকুম মা-কিসুন।
আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, জাহান্নামীরা নজিরহীন এবং অকল্পনীয় হতাশায়, কষ্টে, নির্যাতনে আল্লাহকে ডাকতে শুরু করবে। কোনোদিকে কোনো আশা নেই। তারা ভাববে, একমাত্র যিনি এখন আমাদের কথা শুনবেন এবং আমাদের জবাব দিবেন তিনি হলেন আল্লাহ। তাই, তারা আল্লাহকে ডাকতে শুরু করবে।
অমুসলিমরা, যারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিল। দুনিয়াতে থাকতে নিজেদের খুব স্মার্ট মনে করতো। তখন, কাকুতি মিনতি করতে থাকবে। পাপীরা যারা আল্লাহকে অবজ্ঞা করেছিল। ঔদ্বত্যের সাথে তারা এভাবে কথা বলতো- "আমি কি করবো না করবো আমাকে বলতে এসো না। আমি নামাজ পড়তে চাই না। এটা হারাম তো কি হয়েছে। তবু আমি করবো। তুমি এতে নাক গলাতে এসো না। তোমার এতে কী? এটা আমার সমস্যা। "
তখন ছোট্ট বাচ্চার মত কাঁদতে থাকবে। সেখানে কোনো দাম্ভিকতা থাকবে না। সে উপলব্ধি করবে আর ডাকতে থাকবে- ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ!
একমাত্র আল্লাহ জানেন কত বছর ধরে এভাবে ডাকার পরে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন- " أَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ - তোমাদের সামনে কি আমার আয়াত সমূহ পঠিত হত না? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে।" (২৩:১০৫)
তারা বলবে, رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ - رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَاِنۡ عُدۡنَا فَاِنَّا ظٰلِمُوۡنَ - قَالَ اخۡسَـُٔوۡا فِیۡهَا وَ لَا تُکَلِّمُوۡنِ - ‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট’। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এত্থেকে বের করে নাও, আমরা যদি আবার কুফুরী করি তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম। আল্লাহ বলবেন- ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, আমার সঙ্গে কোন কথা বল না।’ (২৩: ১০৬-১০৮)
আমাকে ডেকো না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমনকি তাঁকে ডাকার ক্ষমতাও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিবেন। ইখসায়ু ফিইহা ওলা তুকাল্লিমুন।
সাট আপ। আমি তোমাদের কোনো কথাই শুনতে চাই না। তোমাদেরকে এই দুনিয়ায় চান্সের পর চান্স দেওয়া হয়েছে। সুযোগের পর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার তুমি ওয়াদা করতে ইয়া আল্লাহ আর করবো না। কিন্তু দুইদিন পর আবার যে সেই। কোন কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এখন বিশ্বাস করবেন যে, তুমি আসলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। আর কোনো আশা নেই।
আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, কোন কারণে একজন ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে পছন্দ করবে। এইরকম শাস্তি হ্যান্ডল করার যে রিস্ক!! আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার যে মারাত্মক ঝুঁকি! কি এক অপমান!!
আল্লাহ সূরা আলে ইমরানে বলেছেন- وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ - আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন।
-----
এ সূরার শিক্ষা থেকে যা করবোঃ
------ * --------
১। উপর উল্লেখিত গুণগুলো অর্জন করার চেষ্টা করবো।
২। শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দুয়াগুলো পড়বো- رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ هَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ - وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ - ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়ত্বানের কুমন্ত্রণা হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, হে আমার প্রতিপালক! যাতে তারা আমার কাছে আসতে না পারে।’ (২৩ঃ৯৭-৯৮)
৩। শেষ আয়াতে উল্লেখিত ক্ষমা চাওয়ার দুয়াটি মুখস্ত পড়বো- رَّبِّ اغۡفِرۡ وَ ارۡحَمۡ وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰحِمِیۡنَ - ‘হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা কর ও রহম কর, তুমি রহমকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।’
৪। সম্ভব হলে সূরাটি মুখস্ত করবো এবং নামাজে পড়বো।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق