~~সালাতের প্রাণ খুশু ও আনসার-মুহাজিরের কাহিনী ~~ (১ম পর্ব)
কোনো একটি যুদ্ধের সময় নবী ﷺ দু’জন পাহারাদার নিয়োগ করেন। তাদের একজন ছিলেন মুহাজির, অন্যজন আনসার। একটা সময় আনসারী সাহাবী (রাদ.) নামাজের জন্য উঠেন, তখন মুহাজির সাহাবী (রাদ.) ক্লান্তিতে ঘুমাচ্ছন্ন। এই সময় প্রতিপক্ষের এক মুশরিক এই অবস্থা দেখে ফেলে। সে সুযোগ বুঝে আনসার সাহাবীর দিকে তীর ছুড়ে মারে। এটা তাঁর গায়ে লাগে কিন্তু কষ্ট করে তীর বের না করেই রক্তাক্ত অবস্থায় নামাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এটা দেখে ঐ মুশরিক আবার তীর নিক্ষেপ করলো। আবারও আনসার সাহাবী তীরটি অপসারণ করে নামাজ চালিয়ে গেলেন। কিন্তু যখন তৃতীয় তীরটি আঘাত হানল তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না, রুকু ও সিজদায় চলে গেলেন। এসময়ে মুহাজির সাহাবীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। এটা দেখে মুশরিক ব্যক্তি পালিয়ে যায়। সাহাবী সাথীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে ওঠেন—
“সুবহান-আল্লাহ! সে যখন প্রথম তোমাকে আঘাত করেছিল আমাকে ডাকলে না কেন?”
আনসারী সাহাবীর উত্তর ছিল:
“আমি তখন এমন একটি সূরা তিলাওয়াত করছিলাম যা আমি খুব ভালোবাসি, তাই সেটা থামাতে চাচ্ছিলাম না।” [হাসান হাদীস, আবু দাউদ]
আল্লাহ আকবার! আমাদের পক্ষে কি কল্পনা করা সম্ভব তিনি কী পরিমাণ আবেগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে আল্লাহর সামনে সালাতে নিবিষ্ট ছিলেন?
নামাজের মধুরতা
সালাত সর্বোত্তম ইবাদত। যখন কেউ সালাত শেষ করার উদ্দেশ্যে সালাম ফেরায় (তাসলিম) তখন সে নিশ্চিতভাবেই প্রশান্তি লাভ করে। ইবনে আল-জাওযী সালাতের ব্যাপারে বলতে গিয়ে চমৎকার একটি উক্তি করেছেন:
إنا في روضة طعامنا فيها الخشوع و شرابنا فيها الدموع
“নিশ্চয়ই আমরা এমন এক উদ্যানে অবস্থান করি যেখানে আমাদের আহার্য হচ্ছে খুশু আর পানীয় হলো অশ্রু।”
যে ব্যক্তি নামাজে পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকে, সেই লোকের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) বলেন:
“এমন নিমগ্ন ইবাদতে তাঁর রুহ প্রকৃতই আল্লাহর আরশের চারপাশে তাওয়াফ করতে থাকে।”
কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে, ইনারা তো অনেক আগের যুগের মানুষ, এখন আর কেউ সালাতে এরকম প্রশান্তি ও স্বাদ অনুভব করে না। অথচ একথা মোটেও সত্য নয়; আজও যেকেউ নামাজের মিষ্টতার সেই প্রশান্তির সন্ধান পেতে পারে। এজন্য দরকার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন আর খুশু অর্জনের রহস্য উন্মোচন করা। এর মাধ্যমেই নামাজ হতে পারে আমাদের সবকিছুর সমাধান; সকল দুঃখ-কষ্ট, গ্লানি ও হতাশার ঔষধ; এমন উপাদেয় যার মাধ্যমে আমরা পরম তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করি; এমন কিছু চাই যেন তা কখনও নিঃশেষ না হয়।
এবার দেখবো কীভাবে নামাজের এই মধুরতা ও প্রশান্তি অর্জনের রহস্য উন্মোচন করা যায়। আল্লাহর সাথে আলাপনের মাধ্যমে এটা ভালোভাবে অর্জন করা সম্ভব।
[১[ প্রথমত, খুশু সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। খুশু মানে শুধু এই না যে, নামাজে খুবই কষ্ট করে এমন মনোনিবেশ করেছেন যেন আপনাকে এখন ভিন্নমুখি করা অসম্ভব। একাগ্র হৃদয় বা মন খুশুর প্রথম স্তর। এটা অনেকটা এরকম যে আপনি কেবল একটি বাড়ির দরজা খুলেছেন, এখনো পুরো বাড়িটা দেখার বাকি আছে। খুশুর গভীরতা এরকমই অসীম।
অনেকেই মনে করে মনকে পূর্ণরূপে নিবিষ্ট করা বা নিজের চিন্তাচেতনাকে নির্দিষ্টভাবে কেন্দ্রীভূত করা খুবই কঠিন কাজ। এই ধারণাকে নির্মূল করতে সালাতে আসার সময়ই আমাদের এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে হবে। ধরা যাক আমাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাজে ১০ মিনিট করে সময় লাগে। তাহলে দিনে ব্যয় হয় মাত্র ৫০ মিনিট; এক ঘন্টাও না। বাকি তেইশ ঘন্টা কাটে দুনিয়াবি বিষয়াদির জন্য। এই পঞ্চাশটা মিনিটও কি আমরা এককভাবে নিবিষ্ট মনে অন্য চিন্তা ছাড়া কেবল আল্লাহ তা’য়ালার জন্য দিতে পারি না? এইটুকু সময়ের মাঝেও কি আমরা দুনিয়ার ব্যস্ততা নিয়ে ভাববো?
নামাজ শুরুর আগে এই কথাগুলো এমনভাবে মনে গেঁথে নিতে হবে, যাতে আমাদের নফস আমাদের এই বলে ধোঁকা দিতে না পারে যে “নামাজে মনোযোগ দেয়া খুবই কঠিন”—কারণ খুশু অর্জন অবশ্যই সম্ভব ও সকলের সাধ্যের মধ্যকার একটি কাজ। আমাদের মনে রাখা উচিত, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর আনন্দ ও মিষ্টতা দুনিয়ার যেকোনো প্রলোভনের চাইতে অনেক অনেক আকাঙ্ক্ষিত, বেশি সুখের। শুধু একবার তা অনুভব করলে আর কিছুতেই মন উদাস হবে না।
বই : কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়?
মূল : মিশারী আল-খারাজ
"আমি ও আমার রব" এত চমৎকার বই, যেইদিন পড়ছি আলহামদুলিল্লাহ আর হতাশা কাজ করে না, ভেংগে যাওয়া'র উপক্রম, নুইয়ে পড়ার উপক্রম হলে আলহামদুলিল্লাহ হতাশ হই না।
"নামাজে মধুরতা" বই আলহামদুলিল্লাহ আরো চমৎকার। বইটা পড়ার পর নামাজে ১০০ ভাগের ১ ভাগেরও কম অনুভুতি পাইছি। এই যদি হয় এই ১ ভাগের কম অনুভুতি, এত মায়া এত দরদ সালাতের। সেইদিন বুঝছিলাম আসলে কেন সাহাবীদের পায়ে তীর লাগলে তারা টেরও পায় না।
যাইহোক আমি নাকবাংলা টিম এর প্রতি অত্যান্ত কৃতজ্ঞ। আমার নোমান আলী খান এর একটা কথা বার বার মনে পড়ে, উনি বলছিলো এই বুঝি প্রথম কোরআন শুনলাম উস্তাদ থেকে। উস্তাদের কুরআনের লেকচার শোনার পর মনে হইছিলো এই বুঝি আমি ফাস্ট কোরআন শুনছি। ঠিক সেইদিন উনার সব বই সংগ্রহ করি। কিছু বই এখনো বাকি আছে সংগ্রহ করার। আমার খুব সরাসরি নোমান আলী খান থেকে আরবি ভাষা, কোরআন এর গভীর জ্ঞান অর্জন করার। জানি না কখনো সুযোগ হবে কিনা।
নাক বাংলা টিম আল্লাহ আপনাদের দুনিয়া-আখিরাতে উত্তম সব কিছু দিক আমিন"
অনুভূতি প্রকাশে - বিনতে হায়াত (লেখা ইষত পরিমার্জিত)
আল্লাহ, সালাত, হতাশা থেকে প্রশান্তির পথে চলার জন্য নীচের এই বইগুলো হতে পারে সেরা সহায়ক।
১। কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়? : মিশারী আল-খারাজ
২ । আমি ও আমার রব : উস্তাদ নোমান আলী খান
৩। প্রশান্তির খোজ : ১ উস্তাদ নোমান আলী খান
৪। প্রশান্তির খোজ : ২ উস্তাদ নোমান আলী খান
৫। ডিপ্রেশন : বিষাদের উপত্যকা পেরিয়ে : উস্তাদ নোমান আলী খান
৬. আমার জীবনে আল-ফাতিহা : ইমাম মুতওয়াল্লী আল-শারাওয়ী (রাহ.)
সংগ্রহ করতে পারেন ওয়াফিলাইফ, রকমারি ও আপনার পছন্দের বুকশপ থেকে।
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق