الاثنين، 8 ديسمبر 2025

এই ঘটনাটি কয়েক হাজার বছর আগে ঘটেছিল। নাম তার জুরাইজ।

 Bookish Publisher

3 ي 
এই ঘটনাটি কয়েক হাজার বছর আগে ঘটেছিল। নাম তার জুরাইজ। তাকেই ঘিরেই ঘটনাটি। আমাদের যুগে তাকে জর্জ বলা যেতে পারে, প্রাচীন নাম জুরাইজ।
তিনি ছিলেন খৃস্টান দরবেশ। অতীতের দরবেশদের রীতি অনুযায়ী তিনি নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। অনবরত আল্লাহ তা'আলা এর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। দুনিয়ার বস্তুবাদি বিষয়ের প্রতি উদাসিন থাকার কারণে সবচেয়ে নিম্নমানের পোশাক পরতেন, সকল আনন্দ-বিনোদন থেকেও বিরত থাকতেন।
তাঁর সাথে শুধু তাঁর বৃদ্ধা মা থাকতেন। একদিন কোনো কারণে জুরাইজকে তাঁর মায়ের দরকার পড়লো। তাই তিনি জুরাইজের ইবাদতখানায় আসলেন। কিন্তু ইবাদতখানায় প্রবেশ করতে পারলেন না। কারণ, ইসলামের পূর্বযুগের জাতিসমূহের ফিকহী নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র স্থানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
তাই জুরাইজের মা বাহির থেকেই ডাকলেন,
—জুরাইজ, একটু সাহায্য লাগবে। আসো তো!
জুরাইজ সেসময়ে ইবাদত করছিলেন। তিনি ভাবলেন,
—হে আল্লাহ, নামাজ পড়তে থাকবো নাকি মায়ের ডাকে সাড়া দিবো?
জুরাইজ নামাজ চালিয়ে গেলেন, মায়ের ডাকে সাড়া দিলেন না।
পরের দিন তাঁর মা আবারো আসলেন। তাকে ডাকলেন। কিন্তু জুরাইজ আজও নামাযে। আবারো ভাবলেন, ❝হে আল্লাহ! নামাযের উপর মাকে প্রাধান্য দিবো?❞
তিনি ভাবলেন এটাই ধার্মিকতা, এটাই পুণ্যের কাজ।
তৃতীয়বারের মতো একই ঘটনা ঘটলো। জুরাইজ মাকে উপেক্ষা করে আবারো নামাজ চালিয়ে গেলেন। তখন তাঁর মা রেগে গেলেন। পরপর তিন দিন! একমাত্র ছেলের কাছ থেকে সাহায্য চাচ্ছেন, অথচ ছেলে সাহায্য করতে আসছে না। রাগের মাথায় ছেলের বিরুদ্ধে দু’আ করলেন। আপনারা জানেন, সন্তানের পক্ষে হোক আর বিপক্ষে হোক, পিতামাতার দো’আ কবুল হয়। তো তিনি বললেন,
❝হে আল্লাহ, জুরাইজের মরণ যেন ততক্ষণ না হয় যতক্ষণ সে বেশ্যাদের মুখ না দেখছে।❞
অর্থাৎ তার সম্মান-ইজ্জত ধুলিস্মাৎ করে দিন, পতিতাদের সাথে যেন তাকে দেখা যায়। রাগের মাথায় এ কথা বললেন।
আল্লাহ  বৃদ্ধা মায়ের দু’আ কবুল করলেন। ঘটনাটির অন্যতম একটি সৌন্দর্য এটা যে, আল্লাহ আবার একইসাথে জুরাইজের সম্মানও রক্ষা করেছেন।
তো এক বেশ্যা নিজেকে জুরাইজের কাছে অর্পণ করলো। জুরাইজ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করলেন না, উপেক্ষা করলেন। ফলে সেই বেশ্যা রেগে গেলো।
রেগে গিয়ে সে শহরের খারাপ লোকজনের কাছে গিয়ে বললো,
—তোমরা কি চাও জুরাইজকে আমি প্রলুব্ধ করে বিপদে ফেলি?
তারা বললো—হ্যাঁ।
তো বেশ্যা একটা কূটচাল চাললো। যেহেতু জুরাইজ তার প্ররোচনায় পা দিলেন না, জুরাইজের কাছে তার কোনো গতি হচ্ছিলো না, তখন বেশ্যাটি এক রাখাল কৃষকের মাধ্যমে গর্ভবতী হয়ে পড়লো। তখন শহরের লোকজনের সামনে বেশ্যাটি দাবী করলো, “এটা জুরাইজের সন্তান।”
এটা শুনে লোকজন খুব ক্ষেপে গেলো। তারা জুরাইজের ওখানে গিয়ে ইবাদতখানা ভেঙে ধ্বংস করে দিলো। জুরাইজকে জুতা আর লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করলো। তখন জুরাইজ বললেন,
—কী হয়েছে? কী করেছি আমি?
তারা বললো—এই বেশ্যা বলছে তার ভূমিষ্ঠ সন্তানের পিতা তুমি!
সাথে সাথে জুরাইজের তাঁর মায়ের দু’আর কথা স্মরণ হলো। তিনি বললেন,
❝যা চোখের সামনে ঘটছে এটা আমার মায়ের দু’আর ফল। আমার নামে এই মহিলা অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ এনেছে।❞
তিনি বললেন, ❝আমাকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে দাও।❞ তারপর তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর বাচ্চাটিকে খোঁচা দিয়ে বললেন,
❝কথা বলো! তোমার পিতা কে?❞
বাচ্চাটি, যে ছিল মানব ইতিহাসে সেই অতি অল্প সংখ্যকদের একজন যারা কোলে থাকতেই কথা বলেছিল। বাচ্চাটি বলে ওঠল—ঐ রাখাল আমার বাবা।
যখন লোকজন এটা দেখলো, তারা জুরাইজের কাছে ক্ষমা চাইলো। তারা এক অলৌকিক ঘটনা দেখতে পেলো চোখের সামনে। তারা বললো, ❝আমরা তোমার ইবাদতখানা সোনা-রূপা দিয়ে আবারো তৈরি করে দিবো।❞
❝না, কাদা আর বালু দিয়েই তৈরি করে দাও, যেমনটা আগে ছিল। আমাকে ইবাদতে মগ্ন থাকতে দাও।❞ জুরাইজ বললেন।
যদিও আল্লাহ  মায়ের বদ-দু’আ কবুল করেছিলেন, শেষমেষ জুরাইজের সম্মানও কিন্তু রক্ষা করেছিলেন। মানে, উভয়ই ঠিকঠাক ছিল।
কিন্তু যে বিষয়টিতে আমি এখানে জোর দিতে চাই, এ হাদীসের এক বর্ণনায় নবী ﷺ বলেছেন,
❝আল্লাহ জুরাইজের উপর রহম করুন। যদি তিনি ফকীহ হতেন, যদি তাঁর জ্ঞান থাকতো, তিনি নামাজ না চালিয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দিতেন।❞
হয়তো তিনি সব ঝামেলা থেকে রেহাই পেতেন, কেবল যদি তাঁর চিন্তাভাবনা ও জ্ঞান থাকতো। এটা সেইসব হাদীসের একটি যেগুলো নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, একজন জ্ঞানী আলেমের মর্যাদা সর্বদা ইবাদতকারী চেয়ে অনেক বেশি।
জুরাইজ রোযা রাখতেন, নামাজ পড়তেন, যিকর করতেন, দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতেন। কিন্তু তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান ছিল না। দিনশেষে সেটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো; যদিও তাঁর ইবাদতের জন্য আল্লাহ তা'আলা বিপদ থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছেন।
এই ঘটনাটি ইবাদতের আমলের উপর জ্ঞানের মর্যাদার ইঙ্গিত দিচ্ছে; যদিও ইবাদতের আমল অবশ্যই রহমতপূর্ণ, পবিত্র, কিন্তু সকল ফরযের পর সবচেয়ে পবিত্র আমল হচ্ছে জ্ঞান। কারণ জ্ঞান ছাড়া আমল ভুল হতে পারে, জ্ঞান দিয়েই সঠিক আমল দেখতে হয়, সঠিক পথ পেতে হয়। জ্ঞানই নূর, এই আলো দিয়েই আমরা অন্ধকারে দেখি।
~~ জ্ঞান আগে নাকি আমল?
বই : প্রশান্তির খোঁজে : ২
মূল : উস্তাদ নোমান আলী খান
হেদায়াতের সাথে জ্ঞানের একটা সম্পর্ক আছে। এজন্য আল্লাহ কুরআনের প্রথম নাযিলকৃত শব্দ 'ইকরা', পড়, তিলাওয়াত কর এই শব্দ দিয়ে এসেছে। তবে এই জ্ঞান থাকতে হবে আল্লাহর দিকে ধাবিত করার জ্ঞান। নইলে? আবুল হাকাম হয়ে যায় আবু জাহেল।
খৃষ্টানরা দ্বাল্লিন বা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল এই জ্ঞানের ঘাটতির কারণে। কারণ হেদায়াতের জ্ঞান না নিয়ে, যাচাই না করে অন্ধের মতো পাদ্রীদের কথা মেনে নিতো। ফলে যেই জ্ঞান তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, হেদায়াতের দিকে নেবার কথা, সেখানে অজ্ঞতা বা জ্ঞানের জাহালাত তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলল। বুখারী শরীফে একটা অধ্যায় আছে "আল-ইলম কাবলাম আমাল" (আমলের আগে জ্ঞান)। কেন? মানুষ বিদআত, শিরক কেন করে? সঠিক জ্ঞানের অভাবে। অর্থাৎ, সঠিক জ্ঞান আপনার জান্নাত বা জাহান্নামে যাবার কারণ হয়ে যায়। তাই, এই সঠিক জ্ঞানের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা, অর্থ খরচ করা আপনার নিজের হেদায়াতের অংশ। নইলে হেদায়াতহীন, বেঠিক ইলমের জীবন দুনিয়াতে যেমন ভোগাবে, আখিরাতেও অন্ধকার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।
আল্লাহ রাসূল (সা) একটা দুআ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফিয়ান। - হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম চাচ্ছি।
কারণ, উপকারহীন ইলম কষ্টের কারণ হবে; দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায়।
আল্লাহর পথে হেদায়াতী উপকারী ইলমের জন্য সংগ্রহ করতে পারেন উস্তাদের কিছু বই।
১। আমি ও আমার রব : উস্তাদ নোমান আলী খান
২ । প্রশান্তির খোজ : ১ উস্তাদ নোমান আলী খান
৩। প্রশান্তির খোজ : ২ উস্তাদ নোমান আলী খান
৪। কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়? : মিশারী আল-খারাজ
৫। শয়তানের থাবা : ২ উস্তাদ নোমান আলী খান
৬। বিস্ময়কর ফাতিহা : উস্তাদ নোমান আলী খান
সংগ্রহ করতে পারেন বুকিশ, রকমারি, ওয়াফিলাইফ ও আপনার পছন্দের বুকশপ থেকে। কমেন্টে সংগ্রহের লিংক দেওয়া থাকবে।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق